এআই’এর কারণে বিদ্যুতের চরম চাহিদা, বাড়ছে উদ্বেগ!

শিরোনাম: আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) চাহিদা: ২০৩০ সাল নাগাদ বিদ্যুতের চাহিদা চারগুণ বাড়তে পারে, সতর্কবার্তা আইইএ-র

বিশ্বজুড়ে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারের কারণে ২০৩০ সাল নাগাদ ডেটা সেন্টারগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ)-এর এক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, এই সময়ে ডেটা সেন্টারগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানের তুলনায় চারগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা উন্নত দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু ডেটা সেন্টারগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা এত বাড়বে যে তা জাপানের বর্তমান বিদ্যুতের চাহিদার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই, ডেটা সেন্টারগুলোতে ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ২০৩০ সাল নাগাদ ইস্পাত, সিমেন্ট, রাসায়নিক ও অন্যান্য শক্তি-নিবিড় শিল্পখাতগুলোর সম্মিলিত চাহিদার চেয়ে বেশি হবে।

এআই প্রযুক্তির প্রসারের ফলে ডেটা সেন্টারগুলোর চাহিদা বাড়ছে, যার প্রধান কারণ হলো এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য বিশাল পরিমাণ ডেটা প্রসেসিংয়ের প্রয়োজন।

এই পরিস্থিতিতে, পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এআই প্রযুক্তির দ্রুত ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করতে পারে। কারণ, ডেটা সেন্টারগুলো বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যা কার্বন নিঃসরণ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

তবে, আইইএ-র মতে, এআই ব্যবহারের মাধ্যমে শক্তি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানো গেলে, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোও সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, এআই ব্যবহার করে বিদ্যুতের গ্রিড ডিজাইন করা যেতে পারে, যা নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এআই শিল্প এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন— শিল্প প্রক্রিয়াগুলোতে দক্ষতা আনা, স্ব-চালিত গাড়ির প্রযুক্তি উন্নত করা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত হুমকি শনাক্ত করা, অথবা জনসাধারণের ভ্রমণের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা পরিকল্পনা করা ইত্যাদি।

এমনকি খনিজ পদার্থ উত্তোলনেও এআই-এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হতে পারে।

তবে, এআই-এর এই বিপুল চাহিদা মেটাতে সরকারগুলোর আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। কারণ, যদি এই প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত না হয়, তাহলে তা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

অনেক ডেটা সেন্টার তাদের কম্পিউটার ঠান্ডা রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি ব্যবহার করে, যা ইতিমধ্যেই পানির অভাব রয়েছে এমন এলাকাগুলোতে সংকট তৈরি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইইএ-র এই পূর্বাভাসে আশঙ্কার দিকটি কম করে দেখানো হয়েছে। তাদের মতে, সরকারগুলোকে এখনই এআই এবং নতুন মেগা ডেটা সেন্টারগুলোর নেতিবাচক প্রভাবগুলো কমাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর এর বড় ধরনের ঝুঁকিও রয়েছে। তাই, এআই প্রযুক্তির প্রসারের ক্ষেত্রে একটি সুসংহত এবং পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *