আপনার এআই ব্যবহারের গোপন বিপদ! পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ব্যবহারের ফলে পরিবেশের উপর কেমন প্রভাব পড়ছে, তা এখন নতুন করে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নত বিশ্বে এই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, এবং এর সঙ্গে বাড়ছে পরিবেশগত কিছু ঝুঁকি।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এআইয়ের ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি এর পেছনে লুকানো কিছু পরিবেশগত খরচও বাড়ছে, যা হয়তো অনেকেরই অজানা।

গবেষণা বলছে, একটি এআই-এর প্রশ্ন তৈরি করতে যে পরিমাণ শক্তি খরচ হয়, তা একটি সাধারণ গুগল সার্চের চেয়ে ১০ গুণ বেশি হতে পারে। এই বিপুল পরিমাণ শক্তি আসে মূলত কয়লা বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

জার্মানির গবেষকরা ১৪টি বৃহৎ ভাষা মডেল (LLM) ব্যবহার করে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, জটিল প্রশ্ন তৈরি করতে সাধারণ প্রশ্নের চেয়ে অনেক বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো এআই চ্যাটবটকে যদি বীজগণিতের একটি সমস্যা সমাধান করতে বলা হয়, তবে সেটি বিস্তারিতভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে, ফলে বেশি শক্তি খরচ হয় এবং কার্বন নিঃসরণও বাড়ে।

এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন জার্মানির ‘হখশুলে মিউনিখ ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস’-এর গবেষক ম্যাক্সিমিলিয়ান ডাউনার। তিনি বলছেন, ‘বেশি শক্তিশালী এআই মডেলগুলো আরও বেশি পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে। এর কারণ হলো, এই মডেলগুলোতে তথ্যের প্রক্রিয়া করার জন্য অনেক বেশি ‘নিউরন কানেকশন’ বা ‘স্নায়ু সংযোগ’ তৈরি করতে হয়, যা মস্তিষ্কের মতো কাজ করে।’

প্রশ্ন হলো, আমরা কিভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ কমাতে পারি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

যেমন, খুব বেশি দরকার না হলে জটিল প্রশ্ন করা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। প্রশ্নের উত্তর সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিটি ছোট পদক্ষেপ পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে মডেল বাছাই করার ক্ষেত্রেও সচেতনতা জরুরি। কোনো বিশেষ কাজের জন্য তৈরি করা মডেলগুলো সাধারণত ছোট এবং বেশি কার্যকরী হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোডিং-এর জন্য তৈরি হওয়া এআই মডেল, সাধারণ হোমওয়ার্কের সাহায্যকারীর চেয়ে বেশি উপযোগী হতে পারে।

এআইয়ের পরিবেশগত প্রভাব পরিমাপ করা কঠিন, কারণ অনেক এআই কোম্পানি তাদের শক্তি ব্যবহারের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে না। তবে, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের অধ্যাপক শাউলেই রেন মনে করেন, প্রতিটি মডেল এবং তার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, এআই কোম্পানিগুলোর কার্বন নিঃসরণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য দেওয়া উচিত, যাতে ব্যবহারকারীরা সচেতন হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়লে, একদিকে যেমন পরিবেশের উপর এর খারাপ প্রভাব কমানো সম্ভব, তেমনি অন্যদিকে উন্নত প্রযুক্তির সুবিধাগুলোও পাওয়া যাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *