এআই-এর ভয়ংকর রূপ! কিভাবে ইহুদি বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর উত্থান প্রযুক্তি বিশ্বে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এর সম্ভাবনা অপরিসীম, তবে এর নেতিবাচক দিকগুলোও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।

সম্প্রতি, বিভিন্ন AI মডেলের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব বা ‘বায়াস’ (bias) নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, যা বিশেষভাবে সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্য তৈরি করতে পারে। এই বিষয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলন মাস্কের মালিকানাধীন ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)-এর চ্যাটবট গ্রোক (Grok) কিছু প্রশ্নের জবাবে ইহুদি-বিদ্বেষী মন্তব্য করতে শুরু করে। বিষয়টি AI গবেষকদের জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল না, কারণ তাঁরা আগেই দেখেছেন যে, বৃহৎ ভাষা মডেল (LLM)-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া AI প্রায়শই বিদ্বেষপূর্ণ, নারীবিদ্বেষী বা বর্ণবাদী মন্তব্য তৈরি করতে পারে।

এই মডেলগুলো ইন্টারনেটের বিশাল ডেটা থেকে প্রশিক্ষণ নেয়, যেখানে অনেক সময় ঘৃণাসূচক কনটেন্টও বিদ্যমান থাকে।

গবেষকরা দেখেছেন, এইসব AI মডেলকে সামান্য ‘উসকানি’ দিলে তারা সহজেই চরমপন্থী মন্তব্য করতে শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি AI মডেলকে কোনো বিশেষ জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে ইতিবাচক বা নেতিবাচক মন্তব্য করতে বললে, সেটি ধীরে ধীরে আরও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করতে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের AI প্রায়ই ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করে, এমনকি তাদের প্রাথমিক প্রশ্নে অন্তর্ভুক্ত না করা হলেও।

সিএনএন-এর পরীক্ষায় দেখা গেছে, তারা যখন গ্রোককে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী (White nationalist) দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইহুদিদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলে, তখন এটি বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করে। যদিও গুগল (Google) এবং ওপেনএআই (OpenAI)-এর চ্যাটবটগুলো এই ধরনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।

গ্রোক অবশ্য শুরুতে বেশ কয়েকবার একই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেছে।

এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কোম্পানিগুলো কাজ করছে। উদাহরণস্বরূপ, এক্সআই (xAI) জানিয়েছে, তারা গ্রোকের প্রশিক্ষণ ডেটা আরও সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচন করছে। ওপেনএআইও (OpenAI) তাদের মডেলগুলোতে ত্রুটিগুলি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে এবং সেগুলোকে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে সংশোধন করার চেষ্টা করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, AI-এর এই পক্ষপাতিত্ব উদ্বেগের কারণ, কারণ এটি মানুষের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। এর মাধ্যমে চাকরির আবেদন থেকে শুরু করে ঋণ অনুমোদন পর্যন্ত অনেক কিছুই প্রভাবিত হতে পারে।

তাই AI মডেলগুলোতে বিদ্যমান পক্ষপাতিত্বগুলো চিহ্নিত করা এবং তা দূর করার জন্য গবেষণা অত্যন্ত জরুরি।

বর্তমানে, বাংলাদেশেও AI-এর ব্যবহার বাড়ছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাতে এর প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

কারণ, AI-এর পক্ষপাতিত্ব বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের প্রতিও বৈষম্য তৈরি করতে পারে। যেমন, কোনো AI যদি চাকরির আবেদনে কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব দেখায়, তবে তা তাদের অধিকারের পরিপন্থী হবে।

সুতরাং, AI-এর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর নৈতিক দিকগুলো নিয়েও সচেতন থাকতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সহায়ক হয়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *