মেলানিয়ার ঘোষণা: এআই প্রকাশনার ভবিষ্যৎ!

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প সম্প্রতি তার স্মৃতিকথার একটি অডিওবুক প্রকাশ করেছেন, যেখানে তার কণ্ঠের আদলে তৈরি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, এই অডিওবুকটি স্বয়ং মেলানিয়া ট্রাম্পের কণ্ঠে পাঠ করা হয়নি, বরং এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তার কণ্ঠের একটি প্রতিরূপ তৈরি করা হয়েছে।

ডিজিটাল প্রকাশনার জগতে এটি একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে, যেখানে এআই-এর ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে।

মেলানিয়া ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন প্রযুক্তির অগ্রগতিকে তুলে ধরেছে, তেমনিভাবে মিডিয়া জগতে এর প্রভাব নিয়েও নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে, প্রযুক্তি এতটাই উন্নত হয়েছে যে, গুগল এবং ইলেভেনল্যাবের মতো কোম্পানিগুলো সহজেই টেক্সট-ভিত্তিক উপাদানকে অডিওতে রূপান্তর করতে পারছে, যা শুনতে অনেকটা মানুষের কণ্ঠের মতোই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কণ্ঠ দেওয়ার (ভয়েসওভার) কাজে এআই-এর ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির এআই এবং প্রযুক্তি বিষয়ক ভাইস প্রভোস্ট ক্লে শিরকি মনে করেন, “হঠাৎ করে মানুষের কণ্ঠের স্থানে এআই-কে বসানো হবে, এমনটা নাও হতে পারে। তবে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।”

শুধু অডিওবুকই নয়, এআই এখন ভিডিও তৈরি করতেও ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি, গুগল তাদের ভিডিও জেনারেশন মডেলের আরও উন্নত সংস্করণ প্রকাশ করেছে, যা দৃশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শব্দ তৈরি করতে পারে, এমনকি চরিত্রের মধ্যে সংলাপও তৈরি করতে সক্ষম। ওপেনএআইও ‘সরা’ নামে একটি ভিডিও তৈরির সরঞ্জাম প্রকাশ করেছে, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

তবে, এখনই সম্ভবত সিনেমা তৈরি করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। শিরকির মতে, এই প্রযুক্তি বর্তমানে ছোট আকারের ভিডিও তৈরির জন্য বেশি উপযোগী, যা সামাজিক মাধ্যমে দেখা যায়। টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবং প্রযোজনা সংস্থাগুলো তাদের বিদ্যমান প্রোগ্রামগুলোতে এআই-কে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে আগ্রহী। এই প্রসঙ্গে, ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের সাঈদ বিজনেস স্কুলের সিনিয়র ফেলো অ্যালেক্স কন্নক বলেন, “প্রযোজকরা তাদের শোয়ের দর্শকদের সঙ্গে আলাপচারিতার জন্য এআই-এর মাধ্যমে টিভি ব্যক্তিত্বদের প্রতিরূপ তৈরি করতে আগ্রহী।”

এআই-এর এই উত্থান মিডিয়া জগতে কর্মসংস্থানের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৪১ শতাংশ নিয়োগকর্তা তাদের কর্মক্ষেত্রে এআই-এর ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন, যার ফলে কর্মী ছাঁটাই হতে পারে।

তবে, সব কাজ হয়তো এআই দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে না। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মতো কিছু ক্ষেত্রে, যেখানে মানুষের অভিজ্ঞতা ও গভীর অনুধাবনের প্রয়োজন, সেখানে এআই-কে সহজে প্রতিস্থাপন করা কঠিন। কন্নকের মতে, প্রযুক্তিগত দক্ষতার সঙ্গে সৃজনশীলতার সংমিশ্রণে কর্মীর চাহিদা বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, আগে যেখানে একটি ডেভেলপমেন্ট বিভাগে তিনজন কর্মী থাকতেন, সেখানে এখন একজন আর্টস-এর (কলা) ডিগ্রিধারী, একজন কোডার এবং একজন গবেষক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই পরিবর্তনের ঢেউ বাংলাদেশের মিডিয়াতেও লাগতে পারে। কণ্ঠশিল্পী, সাংবাদিক এবং কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য এআই-এর ব্যবহার নতুন সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই নিয়ে আসবে। এক্ষেত্রে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনগুলো কিভাবে গ্রহণ করা যায় এবং এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কীভাবে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।

অদূর ভবিষ্যতে, আমরা হয়তো দেখব, বাংলা চলচ্চিত্রের ডাবিং শিল্পী বা সংবাদ পাঠকদের কাজের ধরনেও পরিবর্তন আসছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *