চিকিৎসা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসা পর্যন্ত, কেমন হতে পারে বাংলাদেশের চিত্র?
বর্তমান বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) প্রযুক্তি দ্রুত প্রসার লাভ করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানও এর ব্যতিক্রম নয়।
উন্নত বিশ্বে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যখাতে AI-এর ব্যবহার বাড়ছে, যা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাপদ্ধতিকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করছে। এই প্রযুক্তি কিভাবে আমাদের স্বাস্থ্যখাতে প্রভাব ফেলছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মূলত, স্বাস্থ্যখাতে AI-কে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: ভবিষ্যৎ বলার ক্ষমতা সম্পন্ন AI (Predictive AI) এবং মানুষের মত মিথস্ক্রিয়া তৈরি করতে পারা AI (Generative AI)। প্রিডিকটিভ এআই, রোগের পূর্বাভাস দিতে এবং চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো রোগীর নিউমোনিয়া হলে, হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হবে কিনা, সেই বিষয়ে এই প্রযুক্তি পূর্বাভাস দিতে পারে। রোগীর বয়স, লিঙ্গ, অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে, এই অ্যালগরিদম চিকিৎসা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে ডাক্তারদের সাহায্য করে।
অন্যদিকে, জেনারেটিভ এআই তথ্য তৈরি করতে এবং মানুষের মতো উত্তর দিতে পারে। ChatGPT-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে, ডাক্তাররা রোগীদের জন্য সহজে বোধগম্য স্বাস্থ্য নির্দেশিকা তৈরি করতে পারেন।
এছাড়াও, এই প্রযুক্তি চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি এবং বীমা কোম্পানির সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে পারে, যা ডাক্তারদের প্রশাসনিক কাজের চাপ কমায়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে AI-এর ব্যবহার বর্তমানে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কোলনোস্কোপি পরীক্ষার সময়, AI প্রযুক্তি পলিপ শনাক্ত করতে পারে, যা ক্যান্সার বা ক্যান্সারের পূর্বাবস্থা চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত ম্যামোগ্রাম পরীক্ষার ফলাফলের নির্ভুলতা বাড়াতেও AI সহায়তা করছে। এছাড়া, সেপসিস (Sepsis) নামক মারাত্মক সংক্রমণ সনাক্ত করতে এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের স্বাস্থ্যের অবনতি পর্যবেক্ষণেও AI ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে, AI প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডেটা নিরাপত্তা, তথ্যের গোপনীয়তা, এবং অ্যালগরিদমের নির্ভুলতা নিশ্চিত করা জরুরি।
এছাড়া, বীমা কোম্পানিগুলো তাদের দাবির ক্ষেত্রে AI ব্যবহার করলে, তা অনেক সময় জটিলতা তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যখাতে AI-এর সম্ভাবনা বাড়ছে। বিশেষ করে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব রয়েছে, সেখানে AI প্রযুক্তিনির্ভর রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, AI-এর মাধ্যমে তৈরি করা স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপ্লিকেশন বা টেলিমেডিসিন পরিষেবা, গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ আরও বাড়াতে পারে।
যদিও, বাংলাদেশে AI প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা, স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ডেটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
এছাড়াও, প্রযুক্তি ব্যবহারের খরচ এবং এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
ভবিষ্যতে, AI প্রযুক্তি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, যা চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে। তবে, এর সফল প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন সরকারের সঠিক পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
AI প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে, আমরা একটি সুস্থ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন