**কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে ফ্যাশন: মডেলের ভবিষ্যৎ কী?**
বিশ্বজুড়ে ফ্যাশন জগতে এখন আলোচনার বিষয়বস্তু হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence বা AI) ব্যবহার। সম্প্রতি আমেরিকান ভোগ (Vogue) ম্যাগাজিনের একটি সংখ্যায় এআই মডেলের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। শুধু ভোগ নয়, বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড তাদের বিজ্ঞাপনেও এখন এআই মডেল ব্যবহার করছে।
এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, মডেলিং জগতের ভবিষ্যৎ কী?
ভোগ ম্যাগাজিনের আগস্ট মাসের একটি সংখ্যায় জনপ্রিয় পোশাকের ব্র্যান্ড গেস (Guess)-এর বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে মডেল হিসেবে দেখা গেছে একজন নারীকে। তবে, ম্যাগাজিনের পাতায় ছোট হরফে লেখা ছিল, মডেলটিকে তৈরি করা হয়েছে এআই ব্যবহার করে।
বিষয়টি সামনে আসার পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই এর বিরোধিতা করে মন্তব্য করেছেন, যেখানে সত্যিকারের মডেলিং পেশার সুযোগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে, লন্ডন-ভিত্তিক এআই মার্কেটিং সংস্থা সেরাফিন ভালোরার (Seraphinne Vallora) প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেন্টিনা গঞ্জালেজ এবং আন্দ্রেয়া পেত্রেস্কু জানান, গেস-এর হয়ে তারা এই এআই মডেল তৈরি করেছেন। তাদের মতে, এআই ছবিগুলো তৈরি করতে একটি দল কাজ করে এবং তারা এখনো মডেল নিয়োগ করে।
গেস-এর পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছিল, ডিজিটাল পদ্ধতিতে তৈরি করা “ভিভিয়ান” এবং “আনাস্তাসিয়া” নামের দুজন মডেলকে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করতে।
তবে, এআই মডেল ব্যবহারের ধারণাটি নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য এআই মডেল ব্যবহার করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর ম্যানগো (Mango) তাদের কিশোরীদের পোশাকের প্রচারের জন্য একটি এআই-নির্মিত মডেল ব্যবহার করে।
এছাড়াও, লেভিস (Levi’s) তাদের বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক গঠন এবং ত্বকের রঙের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এআই মডেল ব্যবহার করার কথা ঘোষণা করেছে।
এআই মডেল ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন বিজ্ঞাপন তৈরি দ্রুত ও সাশ্রয়ী হচ্ছে, তেমনি কিছু উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে আসল মডেলদের কাজের সুযোগ কমে যেতে পারে এবং সৌন্দর্যের একটি অবাস্তব ধারণা তৈরি হতে পারে।
এই প্রসঙ্গে, মডেল অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা সারা জিফ-এর মতে, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড এবং নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে।
অন্যদিকে, এআই মডেল নির্মাতারা বলছেন, তারা আসল মডেলদের প্রতিস্থাপন করতে চান না, বরং তাদের কাজের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে চান। তাদের মতে, এআই মডেল ব্র্যান্ডগুলোকে বিভিন্ন ধরনের বিকল্প সরবরাহ করে, যা বিজ্ঞাপন তৈরির প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তোলে।
বর্তমানে ভার্চুয়াল প্রভাবশালীদের (virtual influencers) জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। যারা বাস্তব জীবনের মডেলদের মতোই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হয়ে কাজ করেন। তারা সামাজিক মাধ্যমে তাদের অনুসারীদের কাছে ফ্যাশন পণ্য ও জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
ভবিষ্যতে এআই মডেল এবং ভার্চুয়াল প্রভাবশালীদের প্রভাব আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে, এই পরিবর্তনের সঙ্গে কিভাবে মানিয়ে নেওয়া যায় এবং এর নৈতিক দিকগুলো কিভাবে বিবেচনা করা যায়, সেটি এখন ফ্যাশন জগতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন