কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence – AI) ক্রমবর্ধমান ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রবাসী, পরিবেশের উপর এর প্রভাব কতটা?
যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুতগতিতে বিশাল ডেটা সেন্টার তৈরি হচ্ছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) বিকাশের কাজ চলছে। তবে, দেশটির নাগরিকদের মধ্যে পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট এবং এসোসিয়েটেড প্রেস-নোরক সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ যৌথভাবে এই জরিপটি পরিচালনা করে।
জরিপের ফল অনুযায়ী, এআই প্রযুক্তি কর্মক্ষেত্র, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সংস্কৃতির মোড় ঘোরালেও, এর ক্রমবর্ধমান চাহিদা পরিবেশের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
এআই প্রযুক্তির কার্যকারিতা বজায় রাখতে প্রচুর বিদ্যুতের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (International Energy Agency) -র তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ ডেটা সেন্টারগুলোর বিদ্যুৎ খরচ বিশ্বজুড়ে দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপরই রয়েছে চীনের নাম। অনেক জায়গায় ডেটা সেন্টারগুলোয় প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের জন্য কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো হবে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের এই বিপুল চাহিদা মেটাতে শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নতুন প্রজন্মের পারমাণবিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে, যা কার্বন নিঃসরণ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।
নিউইয়র্কের ২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এইডান কলিন্স মনে করেন, এআই ব্যবহারের ফলে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বিদ্যুতের ব্যবহার হয়। তিনি বলেন, “এত বেশি শক্তি ব্যবহার করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনে এর অবদান আমার কাছে খুবই উদ্বেগের।”
জরিপে দেখা গেছে, এআইয়ের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা, মাংস উৎপাদন, বিমান চলাচল এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির (cryptocurrency) মতো শিল্পখাতগুলোর পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে চিন্তিত মানুষের চেয়ে বেশি। উল্লেখ্য, বিটকয়েন (Bitcoin) মাইনিংয়ের জন্য প্রচুর বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।
গবাদি পশু মিথেন গ্যাস তৈরি করে, যা গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও, উড়োজাহাজ জেট জ্বালানি পোড়ালে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়।
ওহাইয়োর ২৯ বছর বয়সী স্বতন্ত্র নাগরিক অ্যারন গানোয়ে মনে করেন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আসা বিদ্যুতের উপর নির্ভরতা বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ। তিনি বলেন, “তারা পরিবেশের ক্ষতি কমিয়ে আনতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা কেবল ডেটা সেন্টার তৈরি করেই যাচ্ছে।”
জরিপে আরও দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা রিপাবলিকানদের চেয়ে এআইয়ের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে বেশি চিন্তিত। মিনেসোটার ৬১ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট অ্যামি ফেনওয়াল্ড বলেন, “আমার মনে হয়, এটা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে।”
তবে, রিপাবলিকান এবং স্বতন্ত্রদের মধ্যেও অনেকে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফ্লোরিডার ৬০ বছর বয়সী রিপাবলিকান রেমন্ড সুয়ারেজ মনে করেন, ডেটা সেন্টার তৈরির জন্য এমন জমি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সংরক্ষণ করা উচিত অথবা কৃষিকাজে লাগানো যেতে পারে। তিনি আরও মনে করেন, এআইয়ের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, যা উদ্বেগের বিষয়।
অন্যদিকে, সাউথ ক্যারোলাইনার ৫২ বছর বয়সী রিপাবলিকান জেমস হর্নারের ধারণা, এআই হয়তো তার নিজস্ব শক্তি সমস্যার সমাধান করবে। তিনি মনে করেন, এটি দেখাবে কিভাবে কার্যকর ও লাভজনক উপায়ে পরিচ্ছন্ন শক্তি তৈরি করা যায় এবং সেই শক্তি ব্যবহার করে এআইকে পরিচালনা করা যাবে।
জরিপে অংশ নেওয়া আমেরিকানদের অধিকাংশই মনে করেন, আগামী এক দশকে এআই পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কানসাসের ৭৯ বছর বয়সী রিপাবলিকান ডগ বোয়েন মনে করেন, এআইয়ের কারণে গ্রহের সম্পদগুলোর উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি হবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ২৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট আমান্ডা হার্নান্দেজ এআইয়ের কারণে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তিনি একটি ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেন।
তার মতে, এআইয়ের উন্নতি হলে ক্যাশিয়ার বা গ্রাহক পরিষেবা দেওয়ার মতো কর্মীদের হয়তো প্রয়োজন হবে না।
সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের এই জরিপটি এআই প্রযুক্তির পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে বিশ্বজুড়ে মানুষের উদ্বেগের চিত্র তুলে ধরে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যেও এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবেশগত দিকগুলো বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস