আতঙ্কের জন্ম! আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে বাড়ছে প্রযুক্তি বর্জন?

আধুনিক প্রযুক্তির যুগে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ক্রমবর্ধমান প্রসারের ফলে, অনেকে এর অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। এই উদ্বেগের ফলস্বরূপ, প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকার প্রবণতা বাড়ছে, যা নতুন ‘লুডাইট’ আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা যেমন কলকারখানার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, তেমনই এই আধুনিক ‘লুডাইট’রা প্রযুক্তিকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন না করে এর অতিরিক্ত ব্যবহার এবং শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতে, বিশেষ করে ‘জেন-জি’ প্রজন্মের মধ্যে, এই প্রবণতা বাড়ছে। তারা স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চাইছে।

তাদের মধ্যে ‘ডাম্বফোন’ (সাধারণ ফোন) ব্যবহারের আগ্রহ বাড়ছে, যা সীমিত সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এবং সহজে আসক্তি তৈরি করে না। পুরনো দিনের ফ্লিপ ফোন এবং ফিল্ম ক্যামেরার প্রতিও তাদের ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। এমনকি, পুরনো দিনের গান শোনার মাধ্যম ক্যাসেট ও ভিনাইলেরও জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

এই আন্দোলনের মূল কারণ হলো, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার জন্য ব্যবহারকারীদের মনোযোগ আকর্ষণে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তারা এমন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে, যা ব্যবহারকারীদের আসক্ত করে তোলে।

মেটা, গুগল এবং অ্যামাজনের মতো বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে। এই পরিস্থিতিতে, অনেক ব্যবহারকারী মনে করছেন, তারা যেন এক ধরনের ‘ইন্টারনেট ফ্যাক্টরি’তে কাজ করছেন, যেখানে তাদের তথ্য, ছবি এবং কার্যকলাপ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর লাভের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাস্তব মানুষের উপস্থিতি কমে আসছে এবং এর জায়গা নিচ্ছে AI-নির্মিত কনটেন্ট। মেটা’র সিইও মার্ক জাকারবার্গ এমন একটি ভবিষ্যতের কথা বলেছেন, যেখানে AI বন্ধুরাই মানুষের চেয়ে বেশি থাকবে।

তবে, AI-এর মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকিও বাড়ছে, যা এই প্রযুক্তি-বিরোধী মনোভাবকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে, ‘লুডাইট ক্লাব’ নামের একটি সংগঠন তৈরি হয়েছে, যা প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে। এই ক্লাবটি বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে তাদের শাখা বিস্তার করেছে।

তাদের মূল লক্ষ্য হলো, প্রযুক্তিকে ঘৃণা না করে, এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং অতিরিক্ত ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জানানো।

বাংলাদেশেও স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে, প্রযুক্তির ভালো-মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং এর অতিরিক্ত ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।

‘লুডাইট’ আন্দোলনের ধারণাটি হয়তো আমাদের দেশের জন্য নতুন, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত বার্তা হলো, প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করা এবং এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *