বদলে যাচ্ছে ফুটবল! এআই-এর মাধ্যমে খেলোয়াড় খুঁজছে শীর্ষ ক্লাব

ফুটবল বিশ্বে খেলোয়াড় বাছাইয়ে নতুন দিগন্ত, এআই-এর (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট।

ফুটবল, এই খেলাটি শুধু বিনোদন নয়, এটি কোটি কোটি মানুষের আবেগ। আর এই খেলার ভবিষত্যকে আরও উজ্জ্বল করতে, খেলোয়াড় বাছাইয়ের প্রচলিত ধারণাতেও আসছে পরিবর্তন।

খেলোয়াড় খুঁজে বের করার জন্য এখন প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে বিশ্বের নামী ক্লাবগুলো। লন্ডন ভিত্তিক একটি প্রযুক্তি সংস্থা তৈরি করেছে এমন একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, যা খেলোয়াড় বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তুলছে।

অ্যাপ্লিকেশনটির নাম aiScout, যা ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের উদীয়মান ফুটবলাররা পেশাদার ক্লাবে নিজেদের যাচাই করার সুযোগ পাচ্ছেন।

অ্যাপটি ডাউনলোড করা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এখানে খেলোয়াড়দের নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন ধরনের অনুশীলন করতে হয় এবং সেগুলোর ভিডিও আপলোড করতে হয়।

এই অ্যাপটিতে ৭৫টির বেশি অনুশীলন রয়েছে, যা খেলোয়াড়দের বিভিন্ন দক্ষতা পরীক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি অনুশীলনের সঠিক পদ্ধতি দেখানোর জন্য রয়েছে ভিডিও।

খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর প্রাপ্ত তথ্যগুলো ক্লাবগুলোর কাছে সরবরাহ করা হয়, যা তাদের খেলোয়াড় বাছাই করতে সহায়ক হয়।

বয়স, লিঙ্গ এবং মাঠের পজিশন অনুযায়ী খেলোয়াড়দের ফিল্টার করারও সুযোগ রয়েছে।

ইতিমধ্যে, চেলসি এবং বার্নলির মতো দুটি প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব এই অ্যাপ ব্যবহার করছে। ক্লাবগুলো তাদের নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী অ্যাপের মধ্যে ট্রায়াল তৈরি করতে পারে এবং তাদের একাডেমির খেলোয়াড়দের একই অনুশীলন করতে দিয়ে একটি মানদণ্ডও তৈরি করতে পারে।

ai.io নামক এই প্রযুক্তি সংস্থার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রিচার্ড ফেলটন-থমাস বলেন, “আমরা এই ডেটা ব্যবহার করে স্কাউটদের সময়কে আরও কার্যকর করতে চাই।

উদাহরণস্বরূপ, একজন স্কাউটকে বলা যেতে পারে, ‘আজকের খেলায় এমন তিনজন খেলোয়াড় আছে যারা আপনার চেলসি মানের চেয়ে ভালো খেলছে’ – তাদের দিকে নজর দিন।”

এই পদ্ধতির কার্যকারিতা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। বেন গ্রিনউড নামে একজন তরুণ, যিনি আগে কোনো পেশাদার ক্লাবের ট্রায়ালে অংশ নেননি, ২০১৯ সালে এই অ্যাপটি ব্যবহার করেন।

নিজের ভিডিও আপলোড করার পর, তিনি চেলসির ট্রায়ালে সুযোগ পান এবং ২০২১ সালে বোর্নমাউথের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই অ্যাপটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার আগে, ১২৫টি দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ফেলটন-থমাসের মতে, এরই মধ্যে ১৩৫ জন খেলোয়াড় এই অ্যাপের মাধ্যমে পেশাদার ক্লাব বা জাতীয় দলে ট্রায়াল দিতে বা চুক্তিবদ্ধ হতে সক্ষম হয়েছেন।

বর্তমানে এই অ্যাপের ডেটাবেজে এক লাখের বেশি খেলোয়াড় রয়েছে। তবে, চেলসি ও বার্নলির সঙ্গে আরও শতাধিক ক্লাব যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

গত মে মাসে তারা মেজর লিগ সকারের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গেও একটি বহু-বছরের অংশীদারিত্বের ঘোষণা করেছে। ফেলটন-থমাস আশা করছেন, খুব শীঘ্রই এই অ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা কয়েক মিলিয়নে পৌঁছাবে।

ফেলটন-থমাস আরও জানান, এই অ্যাপের আয়ের প্রধান উৎস হল ক্লাবগুলোর কাছ থেকে লাইসেন্স ফি নেওয়া। এই ফি ক্লাবগুলোর আকার এবং তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলির ওপর নির্ভর করে।

চেলসির মতো শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলোর জন্য এই ফি কয়েক লাখ টাকা, আর ছোট ক্লাবগুলোর জন্য তা কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

খেলাধুলায় স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে, ক্রীড়া বিশ্লেষণের বিশ্ববাজারের মূল্য প্রায় ২.৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ২২% বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাহলে, প্রশ্ন হলো, এআই-এর এই আগমন কি ফুটবল স্কাউটদের জন্য উদ্বেগের কারণ?

ফেলটন-থমাসের মতে, নতুন প্রযুক্তিগুলো পুরনো পদ্ধতির সঙ্গে একত্রে কাজ করতে পারে।

“এটি একটি বিবর্তন, বিপ্লব নয়,” তিনি ব্যাখ্যা করেন। “আমরা বলতে পারি না যে খেলোয়াড় ম্যাচে কেমন খেলছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সে কেমন আচরণ করে, ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকলে তার প্রতিক্রিয়া কী হয়, অথবা কেউ তাকে বকা দিলে সে কেমন অনুভব করে।

তবে এআই-এর মাধ্যমে খেলোয়াড়দের উন্নতিতে সাহায্য করা সম্ভব, কারণ এটি তাদের ক্লাব এবং স্কাউটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।”

ai.io-এর প্রধান লক্ষ্য ফুটবল হলেও, সংস্থাটি অন্যান্য খেলাতেও তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করার কথা ভাবছে।

এমনকি, খেলাধুলার বাইরে স্বাস্থ্যসেবা, সামরিক প্রশিক্ষণ এবং জরুরি পরিষেবাতেও এই প্রযুক্তির ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *