আতঙ্কিত হবেন না! সিলিয়াক রোগ নির্ণয়ে এআই, দ্রুত মিলবে সমাধান?

বদহজম জনিত রোগের দ্রুত সনাক্তকরণে সহায়ক ‘এআই’ প্রযুক্তি!

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কারের ফলে এখন বদহজম জনিত রোগ নির্ণয় করা আরও সহজ হবে। সম্প্রতি, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি অত্যাধুনিক ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ (এআই) প্রযুক্তি তৈরি করেছেন, যা সেলিয়াক ডিজিজ (coeliac disease) সনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এই রোগটি গ্লুটেন নামক খাদ্য উপাদানের কারণে হয় এবং এর ফলে শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা যায়।

সাধারণত, সেলিয়াক ডিজিজ সনাক্ত করতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এর কারণ হল, বর্তমান পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষ।

তবে, নতুন এই এআই প্রযুক্তি সেই প্রক্রিয়াকে অনেক দ্রুত করতে সক্ষম হবে।

সেলিয়াক ডিজিজ মূলত একটি অটোইমিউন (autoimmune) রোগ। গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন – গম, রাই এবং বার্লি গ্রহণ করলে এই রোগ দেখা যায়।

এর ফলে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, ত্বকে ফুসকুড়ি, ওজন হ্রাস, দুর্বলতা এবং রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে রোগটি সনাক্ত করতে দেরি হলে অপুষ্টি, অস্টিওপরোসিস, বন্ধ্যাত্ব এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

বর্তমানে, সেলিয়াক ডিজিজ নির্ণয়ের জন্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীকে চিহ্নিত করা হয়। এরপর ক্ষুদ্রান্ত্রের বায়োপ্সি করা হয় এবং প্যাথলজিস্টরা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে অন্ত্রের ক্ষতি পরীক্ষা করেন।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি করা এআই প্রযুক্তি এই প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ ও দ্রুত করে তুলবে।

গবেষকরা বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত ৪,০০০ এর বেশি ছবি বিশ্লেষণ করে এই এআই প্রযুক্তি তৈরি করেছেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে, এআই প্রযুক্তি প্যাথলজিস্টদের মতোই নির্ভুলভাবে সেলিয়াক ডিজিজ সনাক্ত করতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, একজন প্যাথলজিস্টের তুলনায় এআই অনেক দ্রুত ফলাফল দিতে সক্ষম। একজন প্যাথলজিস্ট যেখানে একটি বায়োপ্সি পরীক্ষার ফল দিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় নেন, সেখানে এআই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেই কাজটি করতে পারে।

গবেষণাটির প্রধান লেখক, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এলিজাবেথ সোইলক্স বলেন, “এই এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগীরা দ্রুত রোগ নির্ণয় করতে পারবে এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর চাপ কমবে।” গবেষণার সঙ্গে যুক্ত, ড. ফ্লোরিয়ান জ্যাকলের মতে, “এআই দ্রুত ফলাফল দিতে সক্ষম হওয়ায় রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না।”

এই গবেষণাটি সেলিয়াক ইউকে, ইনোভেট ইউকে, কেমব্রিজ সেন্টার ফর ডেটা-ড্রাইভেন ডিসকভারি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার রিসার্চের অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছে।

রয়েল কলেজ অফ প্যাথলজিস্টের প্রেসিডেন্ট ড. বার্নি ক্রোল এই আবিষ্কার সম্পর্কে বলেন, “নতুন এই এআই প্রযুক্তি সেলিয়াক ডিজিজ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে, যা রোগীদের জন্য দ্রুত রোগ নির্ণয়, উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং অপেক্ষার সময় কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।”

যদিও এই প্রযুক্তি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এটি নিঃসন্দেহে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, এই ধরনের এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা অনেক।

উন্নত রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এটি দেশের স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *