আইন কি গল্পেরই অন্য রূপ? অনুসন্ধানে ফিলিপ স্যান্ডস

আইন ও সাহিত্যের সম্পর্ক নিয়ে সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। খ্যাতিমান আইনজীবী ও লেখক ফিলিপ স্যান্ডস এবং কলম্বিয়ার ঔপন্যাসিক জুয়ান গ্যাব্রিয়েল ভাস্কেজের মধ্যে এই আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়। তাঁদের কথোপকথনে উঠে আসে ইতিহাসের অনুসন্ধান, আইনের সীমাবদ্ধতা এবং শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

স্যান্ডসের নতুন বই ‘৩৮ লন্ডন স্ট্রিট’-এ চিলির প্রাক্তন স্বৈরশাসক অগাস্টো পিনোশের বিচার প্রক্রিয়া এবং নাৎসি কর্মকর্তা ওয়াল্টার রাউফের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। রাউফ পিনোশে সরকারের আমলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে, লেখক হিসেবে বহিরাগত হয়েও চিলির ইতিহাস অনুসন্ধানে স্যান্ডসের সাফল্যের কথা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।

আলোচনায় জুয়ান গ্যাব্রিয়েল ভাস্কেজ সাহিত্য ও আইনের মধ্যেকার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, আইন হলো একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে সত্যকে তুলে ধরার চেষ্টা, যেখানে সাহিত্যের কাজ হলো ঘটনার গভীরে গিয়ে প্রশ্ন তৈরি করা। লেখকরা ঘটনার জটিলতা ও বহুস্তরতা তুলে ধরেন, যা বিচারের ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

তাঁদের মতে, সাহিত্য অনেক সময় আইনের চেয়ে গভীর ভূমিকা পালন করতে পারে, বিশেষ করে ঐতিহাসিক ঘটনার স্বরূপ উন্মোচনে।

স্যান্ডস তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে জানান, কীভাবে তিনি ওয়াল্টার রাউফের সঙ্গে তাঁর পরিবারের যোগসূত্র খুঁজে পান। তিনি আরও বলেন, বহিরাগত হওয়ার কারণে অনেক চিলীয় ব্যক্তির থেকে অজানা তথ্য সংগ্রহ করতে তাঁর সুবিধা হয়েছে।

আলোচনার সময়, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সময়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিও প্রাসঙ্গিকভাবে উঠে আসে।

আলোচনায় উঠে আসে, লেখক হিসেবে একটি বিষয়কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি কীভাবে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সূত্রে তিনি জানান, ঘটনার গভীরে যেতে গেলে অনেক সময় কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হয়, যখন মানুষ তাঁদের ভেতরের কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

ভবিষ্যতে পরিবেশ বিপর্যয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি বন্দীশিবিরের নারীদের নিয়ে লেখার পরিকল্পনার কথাও জানান ফিলিপ স্যান্ডস। জুয়ান গ্যাব্রিয়েল ভাস্কেজ তাঁর উপন্যাসে কলম্বিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ হত্যাকাণ্ড—১৯৪৮ সালে হোর্হে এলিয়েসার গাইতানের হত্যাকাণ্ড এবং ১৯১৪ সালে রাফায়েল উরিব উরিবের হত্যাকাণ্ড—নিয়ে কাজ করার কথা জানান।

তাঁর মতে, উপন্যাস ইতিহাসের সেই শূন্যস্থানগুলো পূরণ করতে পারে, যেখানে তথ্যের অভাব রয়েছে।

আলোচনায় উঠে আসে, আইন ও সাহিত্যের মধ্যে কাজের ধরন ভিন্ন হলেও, উভয়েই মানুষের জীবন ও ঘটনার গভীরে প্রবেশ করে। এই আলোচনা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি আইন, সাহিত্য এবং ইতিহাসের সম্পর্ককে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *