বিমান চলাচল: বেতন বন্ধ, ভবিষ্যতের আকাশে ঘোর অমানিশা!

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কাজকর্ম বন্ধ (shutdown) থাকার কারণে দেশটির বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ এখন গভীর অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA)-এর কর্মীরা কাজ চালিয়ে গেলেও, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া, নতুন কন্ট্রোলার নিয়োগ এবং অভিজ্ঞ কর্মীদের ধরে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এই অচলাবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অচলাবস্থা কেবল সমস্যা আরও বাড়াবে। এর ফলে নতুন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার নিয়োগ এবং বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার কাজ করছেন, কিন্তু সরকারি কাজকর্ম বন্ধ থাকার কারণে তারা বেতন পাচ্ছেন না। এই মাসের শুরুতে তাদের বেতন পাওয়া যায়নি, এবং অচলাবস্থা কতদিন চলবে, সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, কন্ট্রোলারদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে, কারণ তারা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। তবে তিনি এ কথাও স্বীকার করেছেন যে, কর্মীদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে।

অনেকেই এখন দেনা করতে বাধ্য হচ্ছেন অথবা আর্থিক সংকট কাটাতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারস-এর প্রেসিডেন্ট নিক ড্যানিয়েলস বলেছেন, “আমরা প্রতিদিন অসম্ভবকে সম্ভব করি, কিন্তু এখন এই অচলাবস্থার কারণে অনেকের পক্ষে জীবন ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। উড়োজাহাজ যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বাদ দিয়ে এখন তারা কিভাবে খরচ চালাবেন, সেই চিন্তায় ব্যস্ত।”

সরকার এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের সংগঠন, উভয়ই সতর্ক করে জানিয়েছে, অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে কর্মীদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর ফলে কর্মীদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা বিমান চলাচলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে।

ড্যানিয়েলস আরও বলেন, “এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা নিয়মিত কাজ করছেন, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমাদের মনে রাখতে হচ্ছে কিভাবে বাড়ির ভাড়া দেব, কিভাবে খাবার কিনব, কিভাবে অফিসে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তেল ভরব। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।”

পরিবহন দপ্তর জানিয়েছে, অনেক কন্ট্রোলারকে এখন টিকে থাকার জন্য দ্বিতীয় কাজ করার কথা ভাবতে হচ্ছে।

এই বিষয়ে ড্যানিয়েলস বলেন, “কন্ট্রোলারদের অন্য কোনো কাজ করা উচিত নয়। নাইট শিফট শেষ করে তাদের অন্য কোনো কাজ করতে যাওয়া উচিত নয়।”

নিউ ইয়র্কের লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে কন্ট্রোলার জো সেগ্রেত্তো বলেন, “অনেকেই আমার কাছে এসে জানতে চেয়েছেন, তারা এখন কী করবেন। গাড়িতে তেল ভরবেন নাকি পরিবারের জন্য খাবার কিনবেন, নাকি সন্তানের দেখাশোনার খরচ জোগাবেন? আমি তাদের কোনো উত্তর দিতে পারিনি।”

এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম দীর্ঘদিন ধরেই কর্মী সংকটে ভুগছে।

সরকার এই বছর কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছিল এবং বেতনও বাড়ানোর কথা ছিল। এমনকি, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের ধরে রাখতে প্রণোদনার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

কিন্তু অচলাবস্থার কারণে অনেক প্রশিক্ষণার্থী এখন ভালো বেতনের অন্য চাকরি খুঁজছেন। ডাফি জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থও তাদের হাতে নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে দেশের নিরাপত্তা এবং বিমান ভ্রমণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়বে। একইসঙ্গে, সিস্টেমের আধুনিকীকরণও বিলম্বিত হবে।

সরকার কয়েক বছর আগে বিমান চলাচল ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য প্রায় ৩১.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছিল। কিন্তু অচলাবস্থার কারণে সেই প্রকল্পের কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *