যাত্রাপথে বিমানযাত্রীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিশৃঙ্খলা একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে।
সংকীর্ণ জায়গা, দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা, এবং অন্যান্য মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণের মিলিত ফলস্বরূপ অনেক সময় যাত্রীরা তাদের ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন। আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
বিমান ভ্রমণের সময় মানসিক চাপ বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো বিমানের ভেতরের পরিবেশ। অনেক সময় বিমানবন্দরের কর্মপরিবেশও যাত্রীদের উদ্বেগের কারণ হয়।
দীর্ঘ লাইন, নিরাপত্তা চেকিংয়ের ঝক্কি, এবং সময়মতো ফ্লাইট ছাড়তে না পারার মতো বিষয়গুলো মানসিক চাপ বাড়ায়। এছাড়াও, বিমানের সীমিত স্থান এবং বসার অস্বস্তি অনেক যাত্রীকে অস্থির করে তোলে।
অর্থনৈতিক বৈষম্যও এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের আলাদা সুযোগ-সুবিধা অনেক সময় অন্যদের মধ্যে ঈর্ষা তৈরি করে, যা মানসিক অস্থিরতা বাড়ায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে, বিমানযাত্রীদের মধ্যে অসদাচরণের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা ছিল ৫,৯৭৩, যা তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫০০ শতাংশ বেশি।
যদিও ২০২২ এবং ২০২৩ সালে এই সংখ্যা কিছুটা কমেছে, তবে প্রাক-মহামারী সময়ের তুলনায় তা এখনো অনেক বেশি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইএটিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়েও এই ধরনের ঘটনা বেড়েছে।
এই ধরনের ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে: নিয়ম না মানা, মুখের অভদ্র আচরণ এবং মদ্যপান। অনেক সময় অ্যালকোহল সেবন এবং নিকোটিনের অভাবও যাত্রীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
এছাড়াও, বিমানের কর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, সিট নিয়ে ঝগড়া, এবং অন্যান্য ছোটখাটো বিষয়গুলোও অনেক সময় বড় ধরনের বিতর্কের কারণ হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানযাত্রীদের মানসিক চাপ কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা, সহযাত্রীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং বিমানের কর্মীদের সহযোগিতা করা।
এছাড়াও, বিমানবন্দরে অতিরিক্ত সময় নিয়ে আসা এবং ভ্রমণের আগে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়াও এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। যুক্তরাজ্যের “নো এক্সকিউজ ফর অ্যাবিউজ” (No Excuse for Abuse) -এর মতো প্রচারণাগুলো যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পারে। বিমান সংস্থাগুলোকেও তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত করতে হবে।
বিমানযাত্রা নিঃসন্দেহে একটি জটিল অভিজ্ঞতা হতে পারে। তবে, কিছু কৌশল অবলম্বন করে এই অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ এবং আনন্দদায়ক করা যেতে পারে। আসুন, আমরা সবাই মিলে শান্তিপূর্ণ এবং আনন্দময় একটি বিমান ভ্রমণের পরিবেশ তৈরি করি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন