বিমান সংস্থাগুলোর গ্রাহক আনুগত্য প্রোগ্রাম: টিকিট কাটার আগে কি জানা দরকার?
বর্তমানে আকাশপথে ভ্রমণের চাহিদা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে বিমান সংস্থাগুলোর গ্রাহক আনুগত্য প্রোগ্রাম (Airline Loyalty Programs)। প্রায় সকল বিমান সংস্থাই তাদের নিয়মিত গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন অফার ও সুবিধা দিয়ে থাকে।
প্রশ্ন হলো, এই প্রোগ্রামগুলো কি সত্যিই আমাদের জন্য লাভজনক? টিকিট কাটার আগে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত?
সম্প্রতি, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ (British Airways – BA) তাদের গ্রাহক আনুগত্য প্রোগ্রামে কিছু পরিবর্তন এনেছে, যা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সাধারণত, এই ধরনের প্রোগ্রামে দুটি প্রধান বিষয় থাকে: রিওয়ার্ড পয়েন্ট এবং লয়্যালটি পয়েন্ট।
রিওয়ার্ড পয়েন্ট, যেমন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ক্ষেত্রে ‘এভিওস’ (Avios), অনেকটা বিমানের নিজস্ব মুদ্রা। এগুলো জমিয়ে ভবিষ্যতে কম মূল্যে টিকিট বা আপগ্রেড পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, লয়্যালটি পয়েন্ট, যা এক বছরে সংগ্রহ করতে হয়, গ্রাহকদের বিভিন্ন সুবিধা এনে দেয়, যেমন – অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বোর্ডিং এবং লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের নতুন নিয়মে, এখন থেকে টিকিটের মূল্যের (ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জ বাদে) উপর ভিত্তি করে লয়্যালটি পয়েন্ট পাওয়া যাবে। আগে ভ্রমণের দূরত্ব ও টিকিটের শ্রেণীর উপর ভিত্তি করে পয়েন্ট পাওয়া যেত।
এর ফলে, এখন এলিট স্ট্যাটাস (যেমন ব্রোঞ্জ) পেতেও বেশি খরচ করতে হচ্ছে। আগে যেখানে ৩,০০০ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৪ লক্ষ টাকার বেশি) খরচ করলেই চলত, সেখানে এখন এই সুবিধা পেতে সাড়ে ৩,০০০ পাউন্ড (প্রায় ৫ লক্ষ টাকার বেশি) খরচ করতে হবে।
এই পরিবর্তনের কারণে অনেক গ্রাহক অন্য বিমান সংস্থার দিকে ঝুঁকছেন।
তবে, শুধুমাত্র ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ নয়, কোভিড-পরবর্তী সময়ে অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলোও তাদের প্রোগ্রামে পরিবর্তন আনছে। এর কারণ হলো, এই প্রোগ্রামগুলো শুধু গ্রাহকদের ধরে রাখতেই সাহায্য করে না, বরং এটি তাদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসায়ও পরিণত হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মূল সংস্থা আইএজি-র (IAG) একটি অঙ্গসংস্থা ‘এভিওস’ (Avios) প্রোগ্রাম থেকে শুধু ২০২৩ সালেই ৪২০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা) লাভ হয়েছে।
তাহলে, একজন সাধারণ যাত্রী হিসেবে আমাদের কি করণীয়?
প্রথমত, বিভিন্ন অফার ও সুবিধাগুলো ভালোভাবে যাচাই করা উচিত। যদি আপনি নিয়মিত ভ্রমণ করেন, তাহলে একটি নির্দিষ্ট বিমান সংস্থার সদস্যপদ নেওয়া লাভজনক হতে পারে।
বিশেষ করে, যে রুটে আপনি বেশি ভ্রমণ করেন, সেই রুটের জন্য সুবিধা পাওয়া গেলে ভালো।
দ্বিতীয়ত, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পয়েন্ট সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। অনেক ব্যাংক তাদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এয়ারলাইন মাইলস (Airline miles) বা অন্যান্য রিওয়ার্ড পয়েন্ট দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের ‘American Express Platinum Card’-এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচের বিনিময়ে প্রায় ৮০,০০০ পয়েন্ট পাওয়া যায়, যা প্রায় ৮০,০০০ এয়ারলাইন মাইলের সমান।
বাংলাদেশেও বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে এই ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়া, বিভিন্ন শপিং আউটলেট বা ব্র্যান্ডের লয়্যালটি কার্ডের মাধ্যমেও পয়েন্ট সংগ্রহ করা যেতে পারে।
তৃতীয়ত, আপনার পয়েন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। রিওয়ার্ড ফ্লাইট বুক করার সময় আগে থেকে পরিকল্পনা করে, অফ সিজনে টিকিট কাটার চেষ্টা করুন।
এছাড়া, ব্যবসার শ্রেণীর টিকিট আপগ্রেড করলে টিকিটের প্রকৃত মূল্যের থেকে অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।
সবশেষে, মনে রাখতে হবে, বিমান সংস্থাগুলো তাদের গ্রাহকদের ধরে রাখতে চায়। তাই, তারা প্রায়ই নতুন নতুন অফার নিয়ে আসে।
যারা নিয়মিত ভ্রমণ করেন, তাদের জন্য এই প্রোগ্রামগুলো অনেক সুবিধা নিয়ে আসতে পারে।
সুতরাং, টিকিট কাটার আগে নিজের প্রয়োজন ও সুবিধাগুলো বিবেচনা করে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক