যুক্তরাষ্ট্রে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা: তরল বিস্ফোরক শনাক্তকরণে পিছিয়ে, নিয়ম শিথিল হওয়ার সম্ভবনা কতটুকু?
বিমানবন্দরে হ্যান্ড ব্যাগে তরল পদার্থ বহনের বিধিনিষেধ শিথিল করার সম্ভাবনা দেখা দিলেও, অনেক মার্কিন বিমানবন্দরে এখনো উন্নত স্ক্যানিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়নি। এর ফলে উড়োজাহাজে নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের মন্ত্রী সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বিমানবন্দরে তরল বহনের বিদ্যমান নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে। এই ঘোষণায় যাত্রীরা খুশি হলেও, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। কারণ, এখনো অনেক বিমানবন্দরে নতুন প্রযুক্তি সম্পন্ন স্ক্যানার বসানো হয়নি, যা তরল বিস্ফোরক সনাক্ত করতে পারে।
২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যে একটি ঘটনা ঘটেছিল। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানতে পারেন যে, জঙ্গিরা স্পোর্টস ড্রিংক্সের বোতলে করে বিস্ফোরক নিয়ে উড়োজাহাজ ধ্বংসের পরিকল্পনা করছিল। এরপর থেকেই হ্যান্ড ব্যাগে তরল এবং জেল জাতীয় পদার্থ বহনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। বর্তমানে, এই বিধিনিষেধের কারণে যাত্রীরা বিমানবন্দরে ভোগান্তির শিকার হন। নিয়ম অনুযায়ী, ১০০ মিলিলিটারের বেশি তরল হ্যান্ড ব্যাগে নেওয়া যায় না।
নতুন স্ক্যানিং প্রযুক্তি (কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান) বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য ছবি আরও স্পষ্ট করে তোলে। এর ফলে তারা সহজে বিস্ফোরক শনাক্ত করতে পারেন। তবে, এই অত্যাধুনিক স্ক্যানার স্থাপন একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। জানা গেছে, প্রতিটি স্ক্যানারের দাম প্রায় ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩২টি বিমানবন্দরের মধ্যে মাত্র ২৫৫টিতে নতুন সিটি স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এই স্ক্যানারগুলো প্রথমে বড় বিমানবন্দরগুলোতে স্থাপন করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৪৩ সালের মধ্যে সব বিমানবন্দরে এই প্রযুক্তি স্থাপন করা সম্ভব হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কর্মচারী ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা জনি জোন্স বলেছেন, নতুন প্রযুক্তির কারণে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা কর্মীদের কাজ অনেক সহজ হয়েছে। এখন সন্দেহজনক কিছু থাকলে তা সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব।
তবে, কিছু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এখনই তরল বহনের বিধিনিষেধ শিথিল করা ঠিক হবে না। কারণ, সব বিমানবন্দরে উন্নত স্ক্যানার স্থাপন করা হয়নি। তাঁরা বলছেন, বিমানবন্দরে নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে হবে।
অতীতে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের পরিদর্শক জেনারেলের এক প্রতিবেদনে নিরাপত্তা দুর্বলতার চিত্র উঠে এসেছিল। ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, টিএসএ (পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসন)-এর কর্মকর্তারা ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে আন্ডার কভার ইন্সপেক্টরদের আনা অস্ত্র বা বিস্ফোরক শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তবে, টিএসএ-এর কর্মীরা বলছেন, তারা তাদের দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সতর্ক। তাদের মতে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কারণে গত ২২ বছরে কোনো উড়োজাহাজ গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়নি।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উন্নত প্রযুক্তি এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে তবেই ভ্রমণ আরও নিরাপদ হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস