শিরোনাম: আল জাজিরার সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলি সেনার জড়িত থাকার অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ২০২২ সালের মে মাসে আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ’র হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইসরায়েলি এক সেনার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি তথ্যচিত্রে এই চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছে।
তথ্যচিত্রটিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসরায়েলি সেনা সদস্য আলন স্ক্যাজিওর নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
জেরুজালেমের বাসিন্দা ও আল জাজিরার হয়ে কাজ করা ফিলিস্তিনি-মার্কিন সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ’কে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন তিনি।
তবে মানবাধিকার সংস্থা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা যেখানে ছিলেন, সেখান থেকে অনেক দূরে ছিলেন আবু আকলেহ। পরবর্তীতে ইসরায়েলও স্বীকার করে যে, তাদের সেনাদের গুলিতেই হয়তো নিহত হয়েছেন এই সাংবাদিক।
নতুন এই তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে, আবু আকলেহ’র হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন বাইডেন প্রশাসন অবগত ছিল। এমনকি, ইসরায়েলি এক জেনারেল ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মার্কিন কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন যে, তার এক সেনা সদস্য সম্ভবত এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
কিন্তু এরপরও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নেয় এবং হত্যাকাণ্ডের জন্য ফিলিস্তিনিদের দায়ী করতে থাকে। এমনকি, যখন ইসরায়েল স্বীকার করে যে তাদের সেনাদের দ্বারাই ঘটনাটি ঘটেছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ‘অনিচ্ছাকৃত’ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে।
তথ্যচিত্রে আরও দাবি করা হয়, আবু আকলেহ’র হত্যার ঘটনা ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে এক ধরনের দায়মুক্তির সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এর ফলস্বরূপ, ইসরায়েলি বাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীদের হাতে ২০০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
তথ্যচিত্রের ভাষ্যমতে, ঘটনার দিন আলন স্ক্যাজিও নামের ইসরায়েলি স্নাইপার আবু আকলেহ’কে গুলি করেন। স্ক্যাজিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিজাত ‘দুভদেভান’ ইউনিটের সদস্য ছিলেন।
আবু আকলেহ’র মৃত্যুর পর স্ক্যাজিওকে অন্য একটি ইউনিটে বদলি করা হয়। তথ্যচিত্র নির্মাতাদের ধারণা, সম্ভবত তদন্তের আওতা থেকে বাঁচানোর জন্যই এমনটা করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে স্ক্যাজিওকে পশ্চিম তীরের জেনিনে রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা হামলায় হত্যা করা হয়। যে শহরে আবু আকলেহ’কে হত্যার অভিযোগ রয়েছে, সেই একই শহরেই স্ক্যাজিও নিহত হন।
আবু আকলেহ’র হত্যাকাণ্ডটি এমন এক সময়ে ঘটেছিল, যখন ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছিল। ২০২২ সালে ওই অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় ১৪৫ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন।
এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলের সহিংসতা আরও বেড়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৫২,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া, পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি হামলা বেড়েছে, যেখানে ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এসব ঘটনার পরও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি, জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন প্রস্তাবের বিরুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র ভোট দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনতে চাইলে, যুক্তরাষ্ট্র তার বিরোধিতা করেছে।
আবু আকলেহ’র হত্যাকাণ্ড এবং এর পরবর্তী ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, একজন সাংবাদিক, যিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন, তার হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের অনীহা অনেককে হতাশ করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা