আলাস্কার হিমবাহ গলছে, বাড়ছে সুনামির ঝুঁকি: বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আলাস্কার পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহগুলি দ্রুত গলতে শুরু করেছে। এর ফলে ভূমিধসের ঘটনা বাড়ছে, যা পরবর্তীতে ভয়ংকর সুনামির জন্ম দিচ্ছে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা এই অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।
আলাস্কার একটি জনপ্রিয় স্থান হলো ট্রেসি আর্ম ফিয়োর্ড। এখানে গত আগস্ট মাসে পাহাড়ের একটি অংশ ভেঙে গভীর সমুদ্রে পতিত হয়।
এর ফলে সৃষ্ট বিশাল ঢেউ আছড়ে পরে বিপরীত দিকের পাহাড়ের উপরে। এই ঘটনায় সেখানকার প্রকৃতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ক্রুজ শিপ সহ বেশ কয়েকটি নৌযান অল্পের জন্য রক্ষা পায়। সৌভাগ্যবশত, কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
তবে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিমবাহ গলতে শুরু করার কারণে পাহাড়ের মাটি দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এর ফলে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে। আলাস্কা দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে, যা সেখানকার পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত আলাস্কার তাপমাত্রা প্রায় ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, এই অঞ্চলে প্রায় ১০০০ এর বেশি স্থানে ধীর গতির ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে কিছু ভূমিধস বছরে কয়েক ইঞ্চি করে এবং কিছু ১০ ফুটের বেশি পর্যন্ত স্থান পরিবর্তন করেছে।
আলাস্কার এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহ গলন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি উভয়ই বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কোনো ভূমিধস গভীর সমুদ্রে পতিত হয়, তবে তা সুনামির সৃষ্টি করতে পারে।
আলাস্কার এই ভূমিধসের ঘটনা পর্যটন শিল্পের উপরও প্রভাব ফেলেছে।
প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক হিমবাহ দেখার জন্য এখানে আসেন। কিন্তু এখন তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ক্রুজ শিপ কোম্পানিগুলো তাদের জাহাজের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) ভূমিধসের উপর নজর রাখছে।
ব্যারি আর্ম নামের একটি স্থানে তারা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য আরও বেশি গবেষণা এবং উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োজন।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি পর্যটকদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
আলাস্কার এই ঘটনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্যোগ আরও বাড়বে, যা শুধু আলাস্কা নয়, সারা বিশ্বের জন্যই একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশের মতো সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোর জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এখনই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন