আলাস্কার দুটি গ্রামে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব, ঘরছাড়া ১৫০০ জনের বেশি মানুষ।
আলাস্কার উপকূলীয় অঞ্চলে টাইফুন হ্যালংয়ের ধ্বংসাবশেষের কারণে সৃষ্ট এক শক্তিশালী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দুটি গ্রাম। এতে ১৫০০ জনের বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। বুধবারও সেখানে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
খবর সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিনের এই দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ জনে, এছাড়াও ২ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
আলাস্কার দক্ষিণ-পশ্চিমের ইউকন-কাসকোইউম ডেল্টার কাছাকাছি অবস্থিত এই গ্রাম দুটি, যা অ্যাঙ্করেজ থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঝড়ের কারণে সেখানকার নিচু এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কোস্ট গার্ড (উপকূলরক্ষী বাহিনী) অন্তত ২৪ জন গ্রামবাসীকে তাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে, কারণ তাদের ঘরগুলো সমুদ্রে ভেসে যাচ্ছিল।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শত শত মানুষ স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো টয়লেট কাজ করছিল না।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে ৭১৫ জন জনসংখ্যার কিপনাক এবং ৩৮০ জন বাসিন্দার কোয়িগিলিংগোক। এই দুটি গ্রামে সাধারণত নৌপথ অথবা আকাশপথে যোগাযোগ করা যায়।
কিপনাকের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা মার্ক রবার্টস বলেন, “কিপনাকের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। আমরা তাদের পাশে থাকার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছি, তবে পরিস্থিতি খুবই খারাপ।”
ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে কিপনাকের বাসিন্দা ব্রিয়া পল জানান, শনিবার রাতে তিনি প্রায় ২০টি ঘরকে চাঁদের আলোয় ভেসে যেতে দেখেছেন। তিনি আরও বলেন, “কিছু বাড়ির লাইট জ্বলছিল, যেন তারা সাহায্যের জন্য আকুতি জানাচ্ছিল, কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি।”
পরের দিন সকালে, তিনি তার বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া একটি বাড়ির ভিডিও ধারণ করেন, যেটি প্রায় ডুবে গিয়েছিল। ব্রিয়া ও তার প্রতিবেশীরা সোমবার রাতে স্থানীয় স্কুলের জিমনেসিয়ামে মিলিত হয়ে আলোচনা করেন।
তারা গান গেয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেন। ব্রিয়া জানান, তিনি জানেন না এখন কোথায় যাবেন। তিনি বলেন, “আমাদের সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিদায় বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে, কারণ আমরা জানি না কবে আবার তাদের সঙ্গে দেখা হবে।”
কোয়িগিলিংগোক থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দূরে, একজন মহিলার মৃতদেহ পাওয়া গেছে। সোমবার রাতে কর্তৃপক্ষ নিখোঁজ হওয়া দুজন পুরুষের সন্ধানের কাজ স্থগিত করেছে, যাদের ঘর ভেসে গিয়েছিল।
সেখানকার একমাত্র স্কুলটিতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু ছিল, কিন্তু টয়লেট কাজ করছিল না। সোমবার রাতে সেখানে প্রায় ৪০০ জন আশ্রয় নিয়েছিল।
জরুরি কর্মীরা টয়লেট মেরামতের চেষ্টা করছেন এবং অস্থায়ী টয়লেট ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রামের প্রতিটি বাড়ি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩৬টি তাদের ভিত্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া, নাপাকিয়াক-এ বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং টোকসুক বে-তে ব্যাপক ভূমি ক্ষয় হয়েছে।
নাইটমিউট-এ, কর্মকর্তাদের মতে, জ্বালানি ড্রামগুলো ভেসে যেতে দেখা গেছে এবং বাতাসে জ্বালানির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ন্যাশনাল গার্ড (জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী) সক্রিয় হয়েছে এবং তারা আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য, জল, জেনারেটর ও যোগাযোগের সরঞ্জাম সরবরাহ করার চেষ্টা করছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘ সময় লাগবে এবং তাদের জন্য অব্যাহত সমর্থন প্রয়োজন। কারণ শীত আসন্ন এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা সময়সাপেক্ষ।
ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কসের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ রিক থোমান বলেন, “আলাস্কার আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো সাধারণত খুবই শক্তিশালী, তবে যখন একটি পুরো সম্প্রদায়ের প্রায় প্রতিটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শীতকালে তাদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন কোনো ব্যক্তি বা ছোট সম্প্রদায়ের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে এই ধরনের শক্তিশালী ঝড়গুলো আরও তীব্র হচ্ছে।
এর আগে, টাইফুন মেরবকের ধ্বংসাবশেষের কারণেও আলাস্কার পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস