শিরোনাম: আলাস্কা: রাশিয়া ও আমেরিকার সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান
আলাস্কা, যা একসময় রাশিয়ার অংশ ছিল, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলের জটিল ইতিহাস, ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নেতাদের এখানে আসা-যাওয়া, সবকিছুই একে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।
আঠারো শতকের শুরুতে, রাশিয়ানরা বেরিং প্রণালী অতিক্রম করে আলাস্কায় প্রবেশ করে, যেখানে তারা পশম ব্যবসার কেন্দ্র গড়ে তোলে। এখানকার আদিবাসীদের উপর তারা নির্মমভাবে সমুদ্রের প্রাণী শিকার করতে বাধ্য করে, তাদের চামড়া ব্যবসার জন্য ব্যবহার করে। এই সময়ে প্রায় ১৮,০০০ আদিবাসী রাশিয়ান অর্থোডক্স মিশনারিদের দ্বারা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল।
তবে, রাশিয়ার দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ক্রিমিয়ার যুদ্ধে পরাজয়ের পর, জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬৭ সালে মাত্র ৭.২ মিলিয়ন ডলারে আলাস্কাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেন। অনেকে এই ঘটনাকে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম এইচ. সেওয়ার্ডের “ভুল” হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে ক্লনডাইক-এ সোনার আবিষ্কারের পর আলাস্কার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
বিংশ শতাব্দীতে আলাস্কার কৌশলগত গুরুত্ব বাড়ে, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন জাপানি বাহিনী অ্যাটু দ্বীপ দখল করে। এরপর, স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন আলাস্কার উপর দিয়ে পারমাণবিক বোমা হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে এখানে রাডার ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়। এখানকার সামরিক অবকাঠামো, রাস্তাঘাট এবং কিছু জনপদ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আলাস্কা বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক নেতাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। জাপানের সম্রাট হিরোহিতো, প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এখানে এসেছিলেন। ১৯৮৪ সালে, প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান এবং পোপ জন পল দ্বিতীয়ের মধ্যে এখানে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এমনকি, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি তুলে ধরতে ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা উত্তর মেরুর কাছাকাছি আলাস্কা ভ্রমণ করেন।
সম্প্রতি, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক যখন উত্তেজনাপূর্ণ, তখনও আলাস্কা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে। ২০১৭ সালে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-কে এখানে স্বাগত জানানো হয়। এর কয়েক বছর পর, শীর্ষ মার্কিন ও চীনা কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিত দেয়।
বর্তমানে, ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়ার প্রতি আলাস্কাবাসীর মনোভাব শীতল হয়েছে। স্থানীয় সরকারগুলো রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পর্যালোচনা করছে। কিছু পর্যবেক্ষক মনে করেন, আলাস্কায় এই ধরনের বৈঠক আয়োজন করা হলে তা ভুল বার্তা দিতে পারে। কারণ, আলাস্কার ইতিহাস একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যেকার সম্পর্ককে তুলে ধরে, তেমনি এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও অনেক।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।