আলাস্কার ঘূর্ণিঝড়ে বাস্তুচ্যুতদের জন্য জরুরি পদক্ষেপ: আশ্রয়কেন্দ্র থেকে হোটেলে!

আলাস্কায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্বাস্তুদেরুদের জন্য চলছে আশ্রয়ণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া।

উত্তর আমেরিকার রাজ্য আলাস্কার পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানা একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের (টাইফুন) ফলে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের জন্য দ্রুত আশ্রয়ণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সম্প্রতি আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সেখানকার অনেক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং বহু মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে।

বর্তমানে, বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষদেরকে শহরের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে সরিয়ে হোটেলে বা ভাড়াকৃত বাসায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

আলাস্কার বৃহত্তম শহর অ্যাঙ্কোরেজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এক হাজারের বেশি হোটেল কক্ষ এবং ভাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অ্যাঙ্কোরেজের পৌর ব্যবস্থাপক বেকি উইন্ড্ট পিয়ারসন মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রাজ্য সরকারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল (টাস্ক ফোর্স) এই কাজটি ত্বরান্বিত করতে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, “সরকার বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষদের তাদের পছন্দসই আবাসনে স্থানান্তরিত করার প্রধান দায়িত্ব পালন করবে। আমরা সেই প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহযোগিতা করছি।

গত ১১ ও ১২ই অক্টোবর টাইফুন হ্যালং-এর আঘাতে আলাস্কার পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঝড়ের তাণ্ডবে সেখানকার ইউপিক সম্প্রদায়ের গ্রামগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে কিপনুক এবং কুইগিলিংগক-এ রেকর্ড উচ্চতার জলস্তর দেখা যায়।

সামরিক বিমানের মাধ্যমে ৬৫০ জনের বেশি মানুষকে অ্যাঙ্কোরেজে সরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে, দুটি বড় আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩৩৮ জন আশ্রয় নিয়েছেন। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কা অ্যাঙ্কোরেজ ক্যাম্পাস এবং শহরের একটি কনভেনশন হলের কাছে অবস্থিত।

কর্তৃপক্ষের ধারণা, আরও অনেক বাস্তুহারা মানুষ এখানে আসতে পারে, কারণ অনেকে এখনো তাদের ঘরবাড়ি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, শীত আসার আগে সবার পক্ষে নিজ নিজ গ্রামে ফেরা সম্ভব নাও হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ ও মেরামতির কাজ চলছে।

তবে দিনের আলো কমে আসছে এবং তাপমাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করেছে। জরুরি অবস্থার কারণে, ওই অঞ্চলের বিমানবন্দরগুলোতে জরুরি আলো এবং জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অ্যাঙ্কোরেজের মেয়র সুজান লাফ্রান্সের আহ্বানে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে টাইফুন-বিধ্বস্ত এলাকার প্রতিনিধি, উপজাতি স্বাস্থ্য ও ত্রাণ সংস্থার প্রতিনিধি এবং অ্যাঙ্কোরেজ স্কুল জেলার সুপারিনটেনডেন্টসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ঝড়ের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া ১৩০ জনের বেশি ছাত্র বর্তমানে অ্যাঙ্কোরেজ স্কুলের বিভিন্ন শাখায় ভর্তি হয়েছে।

আলাস্কার এই দুর্যোগ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য পরিচিত ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের পুনর্বাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক দায়িত্ব।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *