আলবার্টার স্বাধীনতা আন্দোলন: কানাডায় বিভক্তি কামনার প্রেক্ষাপট
কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আলবার্টার আকাশে এখন স্বাধীনতার সুর। সম্প্রতি সেখানকার কিছু মানুষ কানাডা থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখছে। তাদের এই আকাঙ্ক্ষার পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, ফেডারেল সরকারের প্রতি অসন্তোষ এবং নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার তীব্র বাসনা। খবরটি অনেকের কাছেই হয়তো নতুন, তবে এর পেছনে গভীর কিছু কারণ রয়েছে।
আলবার্টার মানুষের এই স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার অন্যতম কারণ হলো, তারা মনে করে কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার তাদের প্রতি সুবিচার করে না। তাদের অভিযোগ, ফেডারেল সরকার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করতে বেশি মনোযোগী। আলবার্টার তেল শিল্প, যা কানাডার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিমালার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও তারা মনে করে।
তারা আরও মনে করে, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের উপর বেশি করের বোঝা চাপায়, কিন্তু সেই অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা দেয় না।
এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তাদের একটা বিশেষ সমর্থন দেখা যায়। ট্রাম্পের “ড্রিল বেবি, ড্রিল” (Drill, baby, drill) নীতির প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে, যা তাদের তেল শিল্পের বিকাশে সহায়ক হবে বলে তারা মনে করে।
তাদের ধারণা, ট্রাম্পের মতো একজন রক্ষণশীল নেতা তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে সমর্থন দিতে পারেন। এমনকি কেউ কেউ এমনও মনে করেন যে, আলবার্টা স্বাধীন হলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে পারে।
আলবার্টার স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে “মেক আলবার্টা গ্রেট এগেইন” (Make Alberta Great Again) স্লোগানটিও বেশ পরিচিত। এই স্লোগানটি মূলত ট্রাম্পের “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন”-এর অনুকরণে তৈরি, যা তাদের স্বাধীনতা এবং নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার আকাঙ্ক্ষাকে আরও জোরালো করে তোলে।
তবে, এই স্বাধীনতা আন্দোলন এত সহজে সফল হবে না। কানাডার সরকার এবং স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এ নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। আদিবাসী সম্প্রদায় মনে করে, কানাডার সঙ্গে তাদের যে চুক্তি রয়েছে, স্বাধীনতার ফলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এছাড়া, কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতাকারী যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও অনেকের আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে, আলবার্টার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। সম্প্রতি আলবার্টার আইনসভায় একটি বিল পাস হয়েছে, যার মাধ্যমে স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোট আয়োজন সহজ করা হয়েছে। এখন মাত্র ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা নিয়ে গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আলবার্টার এই স্বাধীনতা আন্দোলন কানাডার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। একদিকে যেমন বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি ও অধিকার রক্ষার আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে, তেমনিভাবে একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ হিসেবে টিকে থাকার প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য।
এখন দেখার বিষয়, আলবার্টার এই স্বাধীনতা আন্দোলন কতদূর পর্যন্ত গড়ায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন