বাবার সঙ্গে কেমন ছিল আলেক্সান্ডারের সম্পর্ক? যা জানা যায়…

আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট: পিতার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন আর বিশ্বজয়ের প্রেক্ষাপট। প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসে, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর নাম আজও সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হয়।

তাঁর বীরত্ব, সামরিক কৌশল, আর বিশাল সাম্রাজ্য বিস্তারের কাহিনী যুগ যুগ ধরে মানুষকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু আলেকজান্ডারের এই সাফল্যের পেছনে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, বিশেষ করে পিতা ফিলিপের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা অনেকেরই অজানা।

সম্প্রতি ঐতিহাসিক গবেষণা সেই আলোকেই নতুন কিছু তথ্য সামনে এনেছে।

আলেকজান্ডারের জন্ম হয় ৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, মেসিডোনিয়ার রাজা ফিলিপ দ্বিতীয় এবং তাঁর স্ত্রী অলিম্পিয়াসের ঘরে। ঐতিহাসিক সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, শৈশবে আলেকজান্ডারের সঙ্গে তাঁর মায়ের সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ।

ফিলিপ ছিলেন বহুবিবাহের অনুরাগী, এবং তাঁর একাধিক স্ত্রী ছিল। এই কারণে রাজপরিবারে উত্তরাধিকার নিয়ে প্রায়ই দেখা দিতো জটিলতা। ফিলিপের অন্য স্ত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ আলেকজান্ডারের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঈর্ষান্বিত ছিলেন, যা পিতা ও পুত্রের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে সহায়ক হয়েছিল।

মেসিডোনীয় সমাজে, রাজার উত্তরাধিকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা হতো। প্রথমত, উত্তরাধিকারীকে অবশ্যই আরজিয়াদ বংশের সদস্য হতে হতো, যারা ৭ম শতকে মেসিডোনিয়া রাজ্যের পত্তন করেছিলেন।

দ্বিতীয়ত, মায়ের সামাজিক মর্যাদা ও প্রভাব এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তৃতীয়ত, উত্তরাধিকারীর প্রতি রাজ্যের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সমর্থন থাকতে হতো। আলেকজান্ডারের মা অলিম্পিয়াস ছিলেন প্রতিবেশী রাজ্য ইপাইরাসের রাজকন্যা, যা তাঁর উত্তরাধিকারের পথে কিছুটা হলেও বাধা সৃষ্টি করতে পারতো।

যুবক বয়সে আলেকজান্ডার সামরিক এবং শিক্ষাগত উভয় দিকেই পারদর্শীতা অর্জন করেন। তিনি গ্রীক পণ্ডিত এরিস্টটলের কাছে শিক্ষা লাভ করেন।

অল্প বয়সেই তিনি বাবার অনুপস্থিতিতে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং যুদ্ধ পরিচালনা করে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। এই সময়কালে, আলেকজান্ডার এবং তাঁর পিতার মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল।

ফিলিপ তাঁর পুত্রকে উত্তরাধিকার হিসেবে প্রস্তুত করছিলেন, যার প্রমাণস্বরূপ তিনি পুত্রের সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভও তৈরি করেন।

তবে, ফিলিপের জীবনে এক নতুন নারীর আগমন আলেকজান্ডারের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তোলে। ফিলিপ বিয়ে করেন মেসিডোনীয় অভিজাত পরিবারের সুন্দরী কন্যা ক্লিওপেট্রাকে।

এই ঘটনা আলেকজান্ডারের মনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করে, কারণ ক্লিওপেট্রার গর্ভে জন্ম নেওয়া কোনো পুত্রসন্তান আলেকজান্ডারের সিংহাসনের দাবিদার হতে পারতো। এর ফলস্বরূপ, পিতা ও পুত্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে।

বিয়ের অনুষ্ঠানে ক্লিওপেট্রার আত্মীয় অ্যাটলাস যখন ক্লিওপেট্রার গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানের বৈধতা নিয়ে কথা বলেন, তখন আলেকজান্ডার এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। এই ঘটনার জেরে আলেকজান্ডারকে মা অলিম্পিয়াসের সঙ্গে নির্বাসনে যেতে হয়।

পরবর্তীতে, পিতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আরও খারাপ হয়, যখন ফিলিপ পারস্যের এক শাসকের কন্যার সঙ্গে তাঁর সৎ ভাই আররিদাইউসের বিবাহের ব্যবস্থা করেন। আলেকজান্ডার এই ঘটনাকে নিজের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন এবং এর তীব্র বিরোধিতা করেন।

অবশেষে, ৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, ফিলিপের আকস্মিক মৃত্যু হয়। তাঁর কন্যা ক্লিওপেট্রার বিবাহ অনুষ্ঠানে, রাজার দেহরক্ষীদের একজন তাঁকে হত্যা করে।

এই ঘটনার পর আলেকজান্ডার দ্রুত ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং তাঁর রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করেন। পিতার মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার বিশ্বজয়ের অভিযানে নামেন, এবং তাঁর এই সাফল্যের পেছনে পিতা ফিলিপের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গভীর প্রভাব ছিল।

আলেকজান্ডারের জীবনের এই দিকটি তাঁর সাফল্যের প্রেক্ষাপট বুঝতে সহায়ক। পিতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন, উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্ব, এবং ক্ষমতার লড়াই—এসবই আলেকজান্ডারের চরিত্র এবং তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

তাঁর জীবনের এই অধ্যায়, ইতিহাসের পাতায় আজও অম্লান।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *