সৈকতে শর্টস পরা নিয়ে বিতর্ক: বিভক্ত আলজেরিয়ার শহর!

আলজেরিয়ার একটি সমুদ্র তীরবর্তী শহরে পুরুষদের পোশাক নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী চেতাইবি শহরে গ্রীষ্মকালে আসা পর্যটকদের ‘বর্মুডা শর্টস’ পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন মেয়র।

তাঁর মতে, এই ধরনের পোশাক স্থানীয় সংস্কৃতি ও নৈতিকতার পরিপন্থী। এই ঘটনায় পর্যটকদের মধ্যে যেমন ক্ষোভ দেখা দেয়, তেমনই দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ছোট্ট শহর চেতাইবি, যা সুন্দর সমুদ্র সৈকত, পাথুরে উপদ্বীপ এবং সবুজ পাহাড়ের জন্য সুপরিচিত। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হয় এখানে।

পর্যটন এখানকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পর্যটকদের মধ্যে বর্মুডা শর্টস-এর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়।

তবে হঠাৎ করেই শহরের মেয়র লায়াচি আল্লাওয়া এক ডিক্রি জারি করেন, যেখানে সৈকতে বর্মুডা শর্টস পরে ঘোরাঘুরি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মেয়রের মতে, এই ধরনের পোশাক ‘অশালীন’, যা সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।

তিনি আরও বলেন, বহিরাগত পর্যটকদের ‘অগ্রহণযোগ্য’ পোশাক পরা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা বিরক্ত হচ্ছেন।

মেয়রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন স্থানীয় এবং আঞ্চলিক কর্মকর্তারা। এমনকি, প্রতিবেশী আন্নাবা শহরের কর্মকর্তারাও এই ডিক্রি বাতিলের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

ঘটনার দু’দিনের মধ্যেই মেয়র তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে তিনি জানান, কোনো ইসলামপন্থী দলের চাপে পড়ে নয়, বরং স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকদের মধ্যে ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ বজায় রাখতেই তিনি এমনটা করেছিলেন।

তবে এই ঘটনার মাধ্যমে আলজেরিয়ার সমাজে বিদ্যমান গভীর কিছু সমস্যা আবারও সামনে চলে এসেছে। বিশেষ করে, দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসলাম ও আধুনিকতার মধ্যে যে বিভাজন রয়েছে, এই ঘটনা তারই একটি দৃষ্টান্ত।

১৯৯০-এর দশকে আলজেরিয়ায় এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ হয়েছিল, যাতে প্রায় দুই লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। সেই সময় ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরোধ দেখা দেয়।

সমাজবিজ্ঞানী রেদওয়ান বৌজেমার মতে, ইসলামপন্থীরা যদিও সেই যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল, কিন্তু তাদের আদর্শিক প্রভাব এখনো সমাজে বিদ্যমান। তাঁর মতে, এই ধরনের বিতর্ক সেই পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন ইসলামপন্থী দলগুলো জনজীবনে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করত।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আলজেরিয়ার কিছু অঞ্চলে রাজনৈতিক ইসলাম এখনও জনপ্রিয়, যা সেখানকার দুর্নীতি, বৈষম্য এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের অনাস্থার ফলস্বরূপ। এমনকি, প্রতিবেশী শহর জিজেল-এ সমুদ্র সৈকতে নামাজ পড়ার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন এক শীর্ষ কর্মকর্তা সাঈদ বৌখলিফা সতর্ক করে বলেছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের সুযোগ নিয়ে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলো তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এর ফলে, দেশের পর্যটন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *