আলজেরিয়ার বিশাল মরুভূমি এখন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে, যেখানে রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য আর প্রকৃতির অপূর্ব রূপ!
আলজেরিয়া, আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ, সাহারা মরুভূমির বিশালতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। দেশটির মোট আয়তনের প্রায় ৮৩ শতাংশ জুড়েই এই মরুভূমির বিস্তার।
কয়েক দশক ধরে পর্যটকদের জন্য দেশটি কিছুটা কঠিন ছিল, তবে পরিস্থিতি এখন দ্রুত বদলাচ্ছে। আলজেরিয়া সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যটনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে, যা ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর থেকে দেশটির স্বনির্ভরতার একটি অংশ।
পর্যটকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। এখন, সাহারা ভ্রমণে আগ্রহী বিদেশি পর্যটকদের জন্য (ম্যাগরেব দেশগুলো, মালয়েশিয়া ও সেশেলসের নাগরিক ছাড়া) অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালু করা হয়েছে।
এর ফলে, ভ্রমণকারীরা এখন সহজেই ৩০ দিন পর্যন্ত মেয়াদে ভিসা পেতে পারেন, যা একসময় বেশ কঠিন ছিল। ভিসার জন্য আবেদন ফি ৩৭৬ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে, যা আপনার ভ্রমণের সময়সীমার উপর নির্ভর করবে।
এর ফলস্বরূপ, পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আলজেরিয়া সরকার চাইছে ২০৩০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখে উন্নীত করতে।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ৩৩ লক্ষ পর্যটক আলজেরিয়া ভ্রমণ করেছেন, যেখানে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় ২২ লক্ষ, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৪৪% এবং ৬৫% বেশি।
সাহারা মরুভূমির আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তাসিলি ন’আজ্জের ন্যাশনাল পার্ক, যা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত।
এখানে রয়েছে প্রকৃতির তৈরি বিশাল আকারের পাথরের মূর্তি, যা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে গঠিত হয়েছে। এই পার্কটি ‘রক ফরেস্ট’ নামেও পরিচিত। এখানকার পাথরের গায়ে আঁকা ১০,০০০ থেকে ৭,৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পুরনো গুহাচিত্রগুলি যেন এক একটি জীবন্ত ইতিহাস।
এই অঞ্চলের আদিবাসী উপজাতি হলো তৌয়ারেগ (Touareg)। তারা এই বিশাল মরুভূমির কঠিন পরিবেশে জীবন ধারণ করে আসছে।
তৌয়ারেগদের সংস্কৃতি, তাদের জীবনযাত্রা, আতিথেয়তা – সবকিছুই পর্যটকদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা। এই অঞ্চলের একজন অভিজ্ঞ গাইড বাবা আতানফের কথা ধরা যাক।
তিনি গত ৩০ বছর ধরে পর্যটকদের এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। তার মতে, এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা খুবই সাধারণ, যা তাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
সাহারা মরুভূমির এই দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়, যেখানে আধুনিক জীবনের সুযোগ-সুবিধা প্রায় নেই বললেই চলে। এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট পাওয়া কঠিন।
তবে, এই ভ্রমণকে পর্যটকরা ‘মরুভূমির স্পা’ হিসেবে দেখেন, যেখানে প্রকৃতির মাঝে শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাবার, নির্মল বাতাস এবং পর্যাপ্ত ঘুমের সুযোগ রয়েছে।
তৌয়ারেগদের সংস্কৃতিতে আতিথেয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা আগন্তুকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায় এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী চা পরিবেশন করে।
তাদের মতে, চা হলো গল্প বলার মাধ্যম, যা মরুভূমির সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
আলজেরিয়ার সরকার কেবল পর্যটন অবকাঠামো তৈরিই করছে না, বরং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করতেও কাজ করছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে নতুন চুক্তি এবং সমঝোতার মাধ্যমে দেশের সীমান্তগুলি সুরক্ষিত করার চেষ্টা চলছে।
আলজেরিয়ার উত্তরে রয়েছে আলজিয়ার্স শহর, যেখানে ভূমধ্যসাগরের সুন্দর সৈকত, পাহাড় এবং নানান ঐতিহাসিক স্থান বিদ্যমান। এখানকার প্রাচীন রোমান ধ্বংসাবশেষও পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।
বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য আলজেরিয়া ভ্রমণের সুযোগ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি।
ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় ভ্রমণকারীরা এখন সহজেই দেশটিতে যেতে পারছেন। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য আলজেরিয়ার সাহারা মরুভূমি হতে পারে একটি দারুণ গন্তব্য।
আপনি যদি আলজেরিয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তাহলে সেখানকার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। আলজেরিয়ার পর্যটন বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে আপনি ভিসাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন