মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি পুরোনো আইন নিয়ে বিতর্ক চলছে, যা যুদ্ধের সময় দেশটির প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। আইনটির নাম ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’, যা মূলত বিদেশি নাগরিকদের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আইনের আশ্রয় নিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে ভেনেজুয়েলার একটি গ্যাং-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এর পরেই অনেকে এই আইনের কার্যকারিতা এবং এর সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এই আইনটি আসলে কী? ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ তৈরি হয়েছিল ১৭৯৮ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন দেশ হিসেবে বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছিল।
সে সময় ফ্রান্স ও গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে চলা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষ থাকার কথা থাকলেও, বিভিন্ন কারণে তাদের জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে, তৎকালীন সরকার বিদেশি নাগরিকদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে এই আইনটি তৈরি করে।
আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, যুদ্ধের সময় দেশের অভ্যন্তরে থাকা বিদেশি নাগরিকদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাদের দ্বারা দেশের নিরাপত্তার প্রতি সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলা করা।
আইনটি অনুসারে, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট বিদেশি নাগরিকদের গ্রেপ্তার, আটক এবং তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা পান। এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় না, যা নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি করে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ গ্যাং-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এই আইনের আশ্রয় নেওয়ায়, অনেকে মনে করছেন, এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হতে পারে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এই আইনের ব্যবহার সব সময় বিতর্কিত হয়েছে। ১৮১২ সালের যুদ্ধে ব্রিটিশ নাগরিকদের বিরুদ্ধে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান ও অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি, জার্মান ও ইতালীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের বিরুদ্ধে এই আইন ব্যবহার করা হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের বন্দী করা ছিল সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি।
আইনের সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের আইন ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী। তাদের মতে, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা রক্ষার নামে সরকার অতিরিক্ত ক্ষমতা পেলে, তা অনেক সময় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং নিপীড়নের কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে যখন এই আইন নিয়ে বিতর্ক চলছে, তখন বাংলাদেশের জন্য এর প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করা জরুরি। বাংলাদেশের সীমান্ত এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে, বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে আমাদের দেশেও বিভিন্ন আইন ও বিধি-নিষেধ রয়েছে।
তবে, এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্টের মতো কোনো বিশেষ আইন নেই, যা যুদ্ধের সময় বিদেশি নাগরিকদের উপর সরাসরি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং নাগরিক অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সময়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানো অপরিহার্য।
বর্তমানে, এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যে বিতর্ক চলছে, তা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এটি প্রমাণ করে যে, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার নামে প্রণীত আইনগুলো সব সময় ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
তথ্যসূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।