ব্রিটিশ স্থাপত্য এবং সংস্কৃতি গঠনে ইউরোপীয় অভিবাসীদের প্রভাব।
বহু সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষেরা এখানকার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
ঠিক তেমনই এক ঘটনার কথা জানা যায় “দ্য এলিয়েনেশন এফেক্ট” নামের একটি বই থেকে, যেখানে লেখক ওয়েন হাথারলি বিশ শতকে ব্রিটেনের সংস্কৃতিতে মধ্য ইউরোপীয় অভিবাসীদের প্রভাবের কথা তুলে ধরেছেন।
বইটিতে মূলত ‘ভ্যারফ্রেমডুংসেফেক্ট’ বা ‘বিচ্ছিন্নতাবোধ’-এর ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই ধারণা অনুযায়ী, বাইরের থেকে আসা মানুষেরা একটি সমাজের সংস্কৃতিকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে পান, যা স্থানীয়দের কাছে অনেক সময় অপরিচিত থাকে।
অভিবাসীরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে আসেন, যা সেই সমাজের সংস্কৃতিকে নতুন পথে চালিত করে।
বইটিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ও পরে ব্রিটেনে আসা মধ্য ইউরোপীয়দের কথা। এদের মধ্যে ছিলেন স্থপতি, শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং লেখক।
তারা ব্রিটেনের স্থাপত্য, শিল্পকলা এবং চলচ্চিত্র জগতে এক নতুন ধারার সূচনা করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন স্থপতি বেরটল্ড লুবেটকিন এবং আর্নো গোল্ডফিংগার, যারা আধুনিকতাবাদী স্থাপত্যের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তাদের নির্মিত ভবনগুলো এখনো ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে দেখা যায়।
এই অভিবাসীরা ব্রিটেনের সংস্কৃতিতে যে পরিবর্তন এনেছিলেন, তা শুধু স্থাপত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তারা চলচ্চিত্র, সাহিত্য এবং ফ্যাশনের জগতেও তাদের প্রভাব বিস্তার করেন।
তাদের কাজের মাধ্যমে ব্রিটেনের সংস্কৃতিতে নতুনত্ব আসে এবং এটি আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।
তবে, লেখক দেখিয়েছেন, এই অভিবাসীদের অবদানকে সব সময় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অনেক সময় তাদের কাজকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এই বই থেকে আমরা বুঝতে পারি, অভিবাসন একটি জটিল প্রক্রিয়া। অভিবাসীরা একদিকে যেমন নতুন সংস্কৃতি তৈরি করেন, তেমনি তারা নিজেদের সংস্কৃতিকেও টিকিয়ে রাখতে চান।
তাদের এই দ্বৈত যাত্রা উভয় সমাজের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি এর কথা বলতে যাই, তাহলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষেরা আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, মোঘল আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে আসা পার্সিয়ান, তুর্কি, এবং আফগানরা এই অঞ্চলের স্থাপত্য, শিল্পকলা, সাহিত্য এবং খাদ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
একইভাবে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়, ব্রিটিশরা আমাদের দেশে তাদের সংস্কৃতি এবং স্থাপত্য নিয়ে আসে, যা আজও আমাদের সংস্কৃতিতে দৃশ্যমান।
সুতরাং, “দ্য এলিয়েনেশন এফেক্ট” বইটি শুধু ব্রিটেনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করে না, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং অভিবাসনের গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
এটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, বিভিন্ন সংস্কৃতি একসাথে আসার ফলেই একটি সমাজের উন্নতি হয় এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
তথ্য সূত্র: The Guardian