আলিগেটর আলকাট্রাজ-এর ভবিষ্যৎ: একটি বড় প্রশ্নের উত্তর!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের একটি অভিবাসী বন্দী শিবির ‘অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ’ নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে, মূলত এর পরিচালনা এবং দায়বদ্ধতা কার—তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। সম্প্রতি, এই বন্দী শিবির নির্মাণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা হয়েছে, যা সেখানকার অভিবাসীদের অধিকার এবং পরিবেশগত বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেছে।

এই পরিস্থিতিতে, কর্তৃপক্ষের দ্বৈত অবস্থান এবং দায়বদ্ধতা নিয়ে স্পষ্টতার অভাব গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

ফ্লোরিডার এভারগ্লেডসে অবস্থিত এই অস্থায়ী বন্দী শিবিরটি মূলত অবৈধ অভিবাসন রোধে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও, রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে এই শিবিরের পরিচালনা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

ফ্লোরিডা সরকার বলছে, তারা স্থানীয় সংস্থা ও ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (আইস)-এর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এটি পরিচালনা করছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এখানকার দৈনিক কার্যক্রম এবং বন্দী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাজ্যের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

বিষয়টি শুধু প্রশাসনিক জটিলতা নয়, বরং বন্দী শিবিরের বাসিন্দাদের জীবন এতে ঝুঁকির মুখে। যারা এই বন্দী শিবিরে রয়েছেন, তাদের অধিকার এবং নিরাপত্তার বিষয়টিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

মামলাকারীদের প্রধান অভিযোগ, জাতীয় পরিবেশ নীতি অনুযায়ী, এই ধরনের নির্মাণ প্রকল্পের আগে বিস্তারিত পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়নি। পরিবেশবাদী সংগঠন ও স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যরা মনে করেন, ‘অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ’ একটি ফেডারেল প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও, পরিবেশ রক্ষার নিয়ম এক্ষেত্রে মানা হয়নি।

অন্যদিকে, রাজ্য এবং ফেডারেল সরকারের আইনজীবীরা বলছেন, যেহেতু এই বন্দী শিবিরটি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে নির্মিত ও পরিচালিত হচ্ছে, তাই তাদের এই নিয়ম মানতে হয়নি।

এই বিষয়টি নিয়ে বিচারক রডলফো এ. রুইজ দ্বিতীয় তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানতে চান, ‘আসলে কারা এই শিবিরের দায়িত্বে আছেন?’ বিচারকের প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা বিভিন্ন ফ্লোরিডা এজেন্সী এবং আইস-এর মধ্যে হওয়া চুক্তির কাগজপত্র জমা দেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বন্দী শিবিরে থাকা ব্যক্তিদের আইনজীবী পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিক তথ্যের অভাবে আইনজীবীরা তাদের মক্কেলদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

এদিকে, বন্দী শিবিরের পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, সামান্য খাবার ও পোকামাকড়ের উপদ্রবের মধ্যে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে।

তবে, ফ্লোরিডা সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, শিবিরের পরিস্থিতি ‘ভালো’ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগও এই ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।

আইনজীবীরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে দায়বদ্ধতা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, এখানে কার কাছে অভিযোগ জানানো হবে, তা স্পষ্ট নয়। বন্দী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ’-এর মডেল অন্যান্য রাজ্যেও অনুসরণ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে, ইন্ডিয়ানা এবং নেব্রাস্কাসহ আরও কয়েকটি রাজ্যে অনুরূপ বন্দী শিবির খোলার আলোচনা চলছে।

এমন পরিস্থিতিতে, এই ধরনের বন্দী শিবিরগুলোর পরিচালনা এবং জবাবদিহিতা নিয়ে স্বচ্ছতা আনা জরুরি। বিষয়টি শুধু একটি রাজ্যের সমস্যা নয়, অভিবাসন নীতি এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

কর্তৃপক্ষের দ্বৈত অবস্থান এবং দায়বদ্ধতা নিয়ে অস্পষ্টতা দূর করা না হলে, ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *