শিরোনাম: মারাত্মক এলার্জি নিয়ে জীবন: এক তরুণীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
ছোটবেলা থেকেই বাদামের প্রতি এলার্জি ছিল, তবে তেমন গুরুতর কিছু হতো না। কিন্তু ২০১৮ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস-এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হন তিনি। বন্ধুদের সাথে মিন্ট চকোলেট-চিপ আইসক্রিম খাওয়ার পরেই শরীরে শুরু হয় মারাত্মক প্রতিক্রিয়া। দ্রুত হাসপাতালে নিতে হয় তাকে।
এরপর থেকেই যেন তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়। চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে ‘মাস্ট সেল অ্যাক্টিভেশন সিন্ড্রোম’ (MCAS) নামে বিরল এক রোগ বাসা বেঁধেছে। এই রোগের কারণে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফলে সামান্য কিছু থেকে শুরু করে অনেক কিছুই তার শরীরে এলার্জির সৃষ্টি করতে পারে।
এই রোগটি এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য নয়। হাসপাতালে কয়েক সপ্তাহ থাকার পর চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন, তিনি মূলত কয়েকটি খাবার ছাড়া প্রায় সব কিছুতেই এলার্জিক। সেই খাবারগুলো ছিল ওটস, ডিম, বেকন এবং পানি।
এরপর প্রায় চার-পাঁচ মাস তাকে এই সীমিত খাবারগুলোই খেতে হয়েছে। বিষয়টি তার জন্য খুবই কষ্টকর ছিল। অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল করতে তিনি ওষুধ নেওয়া শুরু করেন। এর ফলে ধীরে ধীরে তিনি আরও কিছু খাবার গ্রহণ করতে পারতেন এবং কুকুর-বিড়ালের আশেপাশেও থাকতে পারতেন। এমনকি রেস্টুরেন্টে গিয়েও খাবার খাওয়ার সুযোগ হতো।
একদিন তিনি ছুটি কাটাতে ক্যারিবীয় দ্বীপে যান। সেখানে একটি সালাদ খাওয়ার পরেই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং দ্রুত অ্যানাফিল্যাকটিক শক হয়। এরপর তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর থেকে তার খাদ্য তালিকা আরও সংকুচিত হয়ে আসে।
চিকিৎসকরা তাকে ভিটামিন, মিনারেল ও ক্যালোরিযুক্ত একটি বিশেষ ফর্মুলা দেন, যা খেয়ে তিনি প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছিলেন। বর্তমানে তিনি শুধু পানি, ওটস এবং ওই ফর্মুলা খেয়েই জীবন ধারণ করছেন। খাবারের এই সীমাবদ্ধতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে তিনি বিভিন্ন রান্নার কৌশল চেষ্টা করেন।
নিজের এই অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য তিনি অনলাইনে লেখালেখি শুরু করেন, যেখানে অনেকেই তাকে বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে উৎসাহিত করেন। যেমন: ওটমিল কুকি বা ওট প্যানকেক তৈরি করা।
এলার্জির কারণে তাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। পোষা প্রাণী, পালক বা উলের কাছাকাছি যাওয়া তার জন্য সম্পূর্ণ নিষেধ। তিনি এখন বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক কর্মী নিয়োগের কাজ করেন, যাতে দৈনন্দিন চাপ কম থাকে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার সময়ও তাকে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
এমনকি দেখা করার আগে বন্ধুদের পোশাক পরিবর্তন করতে হয়। প্রেমের ক্ষেত্রেও তাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। ভালোবাসার মানুষটির খাবার খাওয়ার তিন ঘণ্টা পর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, যাতে তার শরীরে কোনো এলার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান না থাকে।
তবে সৌভাগ্যবশত, তার বর্তমান প্রেমিক তাকে সবসময় সমর্থন করেন এবং তারা একসঙ্গে একই খাবার খান। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, তিনি জীবনকে উপভোগ করতে ভালোবাসেন। পার্কের আশেপাশে হাঁটা, আইস স্কেটিং করা বা নৌকায় করে ঘুরতে যাওয়া—এসব কিছুই তিনি করেন।
তার মতে, জীবনকে উপভোগ করতে হলে সবকিছু ভালোভাবে পরিকল্পনা করতে হয়। রেস্টুরেন্টে খেতে গেলেও তিনি নিজের খাবার এবং চামচ সঙ্গে নিয়ে যান। উড়োজাহাজে ভ্রমণ করা তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, পরিবারের সঙ্গে গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান।
জরুরি অবস্থার জন্য তার কাছে সবসময় প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকে, যেমন: এপিপেন, বেনাদ্রিল এবং ইনহেলার। নিজের এই পরিস্থিতি তাকে অন্যদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল করে তুলেছে। তিনি মনে করেন, তার এই অভিজ্ঞতার কথা জানানোর মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে এলার্জি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে।
ভবিষ্যতে তিনি তার খাদ্য তালিকায় আরও কিছু খাবার যুক্ত করার চেষ্টা করছেন। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে এই প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। কারণ নতুন কোনো খাবার খেলেই তার শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তবে তিনি আশা করেন, একদিন তিনি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান