আল্পসের গ্রীষ্ম: ট্রেকিং থেকে রেল ভ্রমণ, স্বপ্নের গন্তব্য!

আল্পস পর্বতমালা: গ্রীষ্মের ছুটিতে ঘুরে আসার এক অসাধারণ গন্তব্য।

ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আল্পস পর্বতমালা যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। কয়েক কোটি বছর আগে আফ্রিকান ও ইউরেশীয় টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষে এর সৃষ্টি হয়।

ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রিয়া সহ মোট আটটি দেশের ওপর দিয়ে বিস্তৃত এই পর্বতমালা। সাদা বরফের আচ্ছাদন, সবুজ বনভূমি, আর ঝর্ণার কলতান – সব মিলিয়ে আল্পস যেন এক স্বর্গীয় স্থান।

পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের আকর্ষণ। ট্রেকিং, হাইকিং থেকে শুরু করে ট্রেন ভ্রমণ – আল্পসে আপনার ছুটি কাটানোর জন্য অসংখ্য বিকল্প বিদ্যমান।

আল্পসের আকর্ষণীয় দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এখানকার ট্রেকিং পথগুলো। যারা পাহাড় ভালোবাসেন, তাদের জন্য এখানে রয়েছে অসাধারণ কিছু ট্রেকিং রুট।

ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা আরও উপভোগ্য করতে বেছে নিতে পারেন ‘হাট-টু-হাট হাইকিং’। এই পদ্ধতিতে এক একটি রাতে পাহাড়ের উপরে অবস্থিত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে (Hut) থাকার ব্যবস্থা থাকে।

দিনের বেলা ট্রেকিং করে রাতে এইসব আশ্রয়ে বিশ্রাম নেওয়া যায়। সুইজারল্যান্ডের জংফ্রাউ অঞ্চলে এই ধরনের হাইকিং বেশ জনপ্রিয়।

জংফ্রাউ অঞ্চলের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ট্রেকিং রুটের মধ্যে রয়েছে:

  • **ফাউলহর্ন (Faulhorn):** এই অঞ্চলের একটি অন্যতম আকর্ষণ হলো ফাউলহর্ন শৃঙ্গ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮,৭৯৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই শৃঙ্গে আরোহন করা ট্রেকারদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। এখানকার চূড়া থেকে ইগার, মঙ্ক এবং জংফ্রাউ-এর মতো বিখ্যাত পর্বতশৃঙ্গগুলো দেখা যায়।
  • **ফার্স্ট (First):** গ্রিন্ডেলওয়াল্ড গ্রামের উপরে অবস্থিত ফার্স্ট-এর চূড়ায় রয়েছে একটি বিশেষ আকর্ষণ – ‘ক্লিফ ওয়াক’। এটি একটি ঝুলন্ত পথ, যা পাহাড়ের গা ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে। এখান থেকে ইগারের উত্তর দিকের দেয়াল দেখা যায়। এছাড়াও এখানে জিপলাইন, মাউন্টেন কার্ট এবং স্কুটারের মতো রাইডেরও ব্যবস্থা আছে।
  • **গ্লেকস্টেইন হাট (Gleckstein Hut):** এই স্থানে রাতের বেলা থাকার অভিজ্ঞতা ট্রেকারদের জন্য বিশেষ কিছু। এখানকার পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত এই কুটিরে (Hut) বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ থাকে।
  • **আইগার ট্রেইল (Eiger Trail):** যারা সরাসরি ইগার পর্বত জয় করতে চান না, তারা এই ট্রেইলে হেঁটে পাহাড়ের কাছাকাছি যেতে পারেন। আল্পিগলেন গ্রাম থেকে শুরু হয়ে ইগারগ্লেচার রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত এই পথে হেঁটে যাওয়া বেশ উপভোগ্য।
  • **ম্যুরেন (Mürren):** এখানকার ব্লুমেন্তাল প্যানোরামা ট্রেইলে হেঁটে আল্পাইন ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যেতে পারে।
  • **শিলথর্ন (Schilthorn):** এখানে পৌঁছে আপনি ৩৬০-ডিগ্রি ভিউ উপভোগ করতে পারবেন।

যারা পাহাড়ের পথে হেঁটে ক্লান্ত, তাদের জন্য রয়েছে ট্রেনে আল্পস ভ্রমণের সুযোগ। জার্মানির মিউনিখ থেকে ইতালির মিলান পর্যন্ত ট্রেন ভ্রমণ আল্পস ঘুরে আসার একটি চমৎকার উপায়।

এই রুটে ভ্রমণের কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান হলো:

  • **ফুসেন (Füssen):** বাভারিয়ার এই সুন্দর শহরটি জার্মানির সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত। এখানে রয়েছে নিওসোয়ানস্টাইন ক্যাসল-এর মতো আকর্ষণ।
  • **ইনসবারুক (Innsbruck):** টাইরলের এই রাজধানী শহরে রয়েছে গোল্ডেন রুফ-এর মতো ঐতিহাসিক স্থান।
  • **সেন্ট এন্টন অ্যাম আর্লবার্গ (St Anton am Arlberg):** শীতকালে স্কি করার জন্য জায়গাটি বিখ্যাত, তবে গ্রীষ্মকালে হাইকিং এবং বাইকিংয়ের সুযোগও রয়েছে।
  • **ল্যান্ডওয়াসার ভায়াডাক্ট (Landwasser Viaduct):** এই অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হলো ল্যান্ডওয়াসার ভায়াডাক্ট।
  • **পনট্রেসিনা (Pontresina):** বার্নিনা রেঞ্জের কাছাকাছি অবস্থিত এই গ্রামে আপনি প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
  • **সন্ড্রিও (Sondrio):** ইতালির এই শহরে রয়েছে ঐতিহাসিক দুর্গ এবং রেনেসাঁ যুগের প্রাসাদ।

আল্পসের সৌন্দর্য শুধু প্রকৃতিতেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, যা এই অঞ্চলের সংস্কৃতিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

এছাড়াও, এখানকার স্থানীয় সংস্কৃতি, খাবার এবং মানুষের জীবনযাত্রা পর্যটকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে।

সুতরাং, আপনি যদি প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাহলে আল্পস হতে পারে আপনার জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। পাহাড়ের চূড়ায় ট্রেকিং, স্বচ্ছ লেকের পাশে বিশ্রাম অথবা ট্রেনে করে আল্পসের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা – আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করে তুলবে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *