আতঙ্কের অবসান? বিজ্ঞানীরা আলঝেইমার রোগের ওষুধ আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে!

স্মৃতিভ্রংশ রোগের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত, মানব মস্তিষ্কের টিস্যু ব্যবহার করে যুগান্তকারী গবেষণা।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বা স্মৃতিভ্রংশ (dementia) একটি গুরুতর সমস্যা, যা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ। এই রোগের চিকিৎসায় নতুন দিশা দেখাচ্ছে একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী।

তাঁরা আলঝেইমার্স রোগের প্রাথমিক পর্যায়গুলো মানব মস্তিষ্কের জীবন্ত টিস্যু ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই গবেষণার ফলে রোগটি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানা এবং দ্রুত চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এডিনবার্গের বিজ্ঞানীরা এক অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে মানুষের মস্তিষ্কের টিস্যু নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁরা আলঝেইমার্স রোগীদের মস্তিষ্ক থেকে নেওয়া ‘অ্যামাইলয়েড বিটা’ নামক একটি বিষাক্ত প্রোটিন, যা এই রোগের প্রধান কারণ, তা সুস্থ মানুষের মস্তিষ্কের টিস্যুতে প্রবেশ করান।

এর ফলে বিজ্ঞানীরা সরাসরি দেখতে পান কীভাবে এই প্রোটিন মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে সংযোগ নষ্ট করে দেয়। মস্তিষ্কের কোষগুলোর এই সংযোগকে ‘স্নায়ু সংযোগ’ (synapses) বলা হয়, যা স্মৃতি ও চিন্তা করার ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতে জরুরি।

এই গবেষণার জন্য, বিজ্ঞানীরা ক্যান্সার রোগীদের টিউমার অপসারণের সময় তাঁদের অনুমতি নিয়ে মস্তিষ্কের সামান্য টিস্যু সংগ্রহ করেন। এরপর, বিশেষ উপায়ে সেই টিস্যুগুলোকে বাঁচিয়ে রেখে, তাদের উপর আলঝেইমার্স রোগের প্রোটিনের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হয়।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যখন সুস্থ মস্তিষ্কের টিস্যু এই বিষাক্ত প্রোটিনের সংস্পর্শে আসে, তখন কোষগুলো নিজেদের মেরামত করতে পারে না। এমনকি, সামান্য পরিমাণে ‘অ্যামাইলয়েড বিটা’র পরিবর্তনও মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়।

গবেষক দলের প্রধান, ড. ক্লার ডুরান্ট জানিয়েছেন, এই গবেষণা আলঝেইমার্স রোগ নিয়ে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করবে। তিনি আরও বলেন, “আমরা জীবিত মানব মস্তিষ্কের টিস্যু ব্যবহার করে আলঝেইমার্স রোগের মৌলিক বিষয়গুলো পরীক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি।

আমরা বিশ্বাস করি, এই পদ্ধতি ভবিষ্যতে রোগীদের জন্য দ্রুত ফলদায়ক চিকিৎসা আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে।”

এই গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ‘টেম্পোরাল লোব’ (temporal lobe) নামক অংশে ‘টাউ’ (tau) নামক আরেকটি প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আলঝেইমার্সের প্রাথমিক পর্যায়ে এই অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সম্ভবত, ‘টাউ’ প্রোটিনের আধিক্যের কারণেই এই অঞ্চলের কোষগুলো দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে।

এই গবেষণাটি ‘রেস এগেইনস্ট ডিমেনশিয়া’ নামক একটি দাতব্য সংস্থা এবং ‘জেমস ডাইসন ফাউন্ডেশন’-এর আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হয়েছে। এই সাফল্যের ফলে বিজ্ঞানীরা এমন ওষুধ তৈরির দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন, যা মস্তিষ্কের স্নায়ু সংযোগের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই গবেষণা ডিমেনশিয়ার চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ, এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা রোগটি মানবদেহে কীভাবে কাজ করে, তা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছেন।

এর ফলে ভবিষ্যতে নতুন ও কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করা সহজ হবে। বাংলাদেশেও যেহেতু মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে, তাই স্মৃতিভ্রংশ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

আমাদের দেশেও এই ধরনের গবেষণা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *