আমলফি উপকূল: ইতালির এক রূপকথার জগৎ। ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত, মনোমুগ্ধকর আমলফি উপকূল যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি।
উঁচু পাহাড়ের গায়ে আঁকাবাঁকা পথ, আর তার পাশে সমুদ্রের নীল জলরাশি—সব মিলিয়ে এই স্থানটি পর্যটকদের কাছে এক স্বর্গরাজ্য। যারা একটু অন্যরকম ভ্রমণের স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য আমলফি উপকূল হতে পারে আদর্শ গন্তব্য।
এখানে আসা প্রতিটি পর্যটকের জন্যই রয়েছে উপভোগ করার মতো নানা কিছু।
রাভেলোর পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত বাগান:
আমলফি উপকূলের অন্যতম আকর্ষণ হলো রাভেলো শহর। পাহাড়ের উপরে এর অবস্থান হওয়ার কারণে এখানে সমুদ্রের সরাসরি কোনো সংযোগ নেই, তবে এর সৌন্দর্য অতুলনীয়।
এখানকার ভিলা রুফলো (Villa Rufolo)-তে প্রায়ই বিভিন্ন কনসার্টের আয়োজন করা হয়। এই ভিলার কারুকার্যখচিত টাইলস ও ঝাড়বাতিগুলো দর্শকদের মন জয় করে নেয়।
এছাড়া, ১৩ শতকের টাওয়ার থেকে এখানকার ফুলের বাগানগুলোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। রাভেলো থেকে হেঁটে ১০ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে ভিলা সিমব্রোনে (Villa Cimbrone)। এখানকার সুন্দর বাগানগুলোতে বিভিন্ন গাছপালা ও ফুলের সমাহার দেখা যায়।
নৌকা ভ্রমণ:
সমুদ্রপথে আমলফি উপকূল ঘুরে বেড়ানো একটি দারুণ অভিজ্ঞতা। এখানকার উপকূলীয় শহরগুলোর মধ্যে চলাচল করার জন্য ফেরি সার্ভিস সবসময়ই একটি ভালো উপায়।
আমলফি ও পজিটানো (Positano) শহর থেকে নিয়মিত নৌকা পাওয়া যায়। এছাড়া, ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে যাওয়ার জন্যও এই নৌকার বিকল্প নেই।
কাছেই রয়েছে সিটারার মতো আকর্ষণীয় শহর, যেখানে অনায়াসেই ঘুরে আসা যেতে পারে। এখানকার ভিয়েত্রি স্যু মার (Vietri sul Mare) -এ রয়েছে নানা ধরনের হস্তশিল্পের দোকান, যেখানে হাতে গড়া সুন্দর জিনিস পাওয়া যায়।
আমালফির ক্যাথেড্রাল:
আমলফি শহরের স্থাপত্যশৈলী এক সময়ের সমৃদ্ধির সাক্ষী। ৯ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে, এটি ছিল ভেনিসের সমতুল্য একটি শক্তিশালী নৌ-প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্র।
এখানকার সরু পথগুলো সবসময় পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে। তবে, ক্যাথেড্রাল অফ সেন্ট অ্যান্ড্রু-তে (Cattedrale di Sant’Andrea) প্রবেশ করলে একটি শান্ত পরিবেশ পাওয়া যায়।
ভেতরে সুন্দর কারুকার্যখচিত স্তম্ভ ও দেয়ালের চিত্রকর্মগুলো দর্শকদের মুগ্ধ করে।
ঈশ্বরের পথ ধরে হাঁটা (Path of the Gods):
যারা ট্রেকিং ভালোবাসেন, তাদের জন্য “ঈশ্বরের পথ” (Il Sentiero degli dei) একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা দিতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ ফুটের উপরে অবস্থিত এই পথ দিয়ে হেঁটে গেলে প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়।
পজিটানো থেকে শুরু করে নচেলে (Nocelle) পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া যায়, যেখানে লেবুর সরবত ও মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথটি হেঁটে শেষ করতে সাধারণত ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে।
পজিটানোর প্রাচীন ভিলা:
পজিটানোর চার্চ অফ সান্টা মারিয়া অ্যাসাউন্টা (Chiesa di Santa Maria Assunta)-এর নিচে লুকানো রয়েছে একটি প্রাচীন রোমান ভিলা। ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে এটি মাটির নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল।
পরে, এটিকে পুনরুদ্ধার করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এখানে প্রাচীনকালের বিভিন্ন চিত্রকর্ম ও শিল্পকর্ম দেখা যায়।
সোরেন্টোতে কেনাকাটা ও সমুদ্রস্নান:
যদিও সোরেন্টো আমলফি উপকূলের অন্তর্ভুক্ত নয়, তবুও একটি দিনের জন্য এখানে ঘুরে আসা যেতে পারে। এখানকার “কোরসো ইতালিয়া” নামক রাস্তায় হেঁটে কেনাকাটা করা যেতে পারে।
এরপর, পিৎজা সান্ত আন্তোনিনো-এর মতো রেস্টুরেন্টে ইতালীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া যেতে পারে। এখানকার “মারিনা গ্র্যান্ড”-এ সমুদ্রস্নানেরও সুযোগ রয়েছে।
সিনেমার কিংবদন্তীর ভিলা:
যারা একটু বিলাসবহুল জীবন পছন্দ করেন, তাদের জন্য পজিটানোর “ভিলা ট্রিভিল” (Villa Treville)-এ থাকার সুযোগ রয়েছে। একসময় এই ভিলাটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ফ্রাঙ্কো জেফিরেলির মালিকানাধীন ছিল।
এখানে থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন সুসজ্জিত স্যুট, যা দর্শকদের এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা দেয়।
অতএব, যারা ইতালি ভ্রমণে যেতে চান, তারা আমলফি উপকূলকে তাদের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিতে পারেন। এখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান, এবং বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার সুযোগ রয়েছে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক