আমানফি উপকূল (Amalfi Coast) : ইতালির এক রূপকথার জগৎ।
ইতালির দক্ষিণে অবস্থিত, মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের লীলাভূমি হলো আমানফি উপকূল। পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রঙিন বাড়িগুলো, নীল সাগরের হাতছানি, আর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা প্রাচীন জনপদ—সবকিছু মিলে এই উপকূলকে যেন এক রূপকথার রাজ্যে পরিণত করেছে।
যারা ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য আজকের এই নিবন্ধে থাকছে এখানকার সেরা দশটি স্থান এবং সেখানকার আকর্ষণীয় কিছু অভিজ্ঞতার গল্প।
১. পোসিতানো (Positano) : পাহাড়ের কোল ঘেঁষে।
পোসিতানো, আমানফি উপকূলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানকার পাহাড়ের গায়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করা সরু পথ, লিনেন কাপড়ের দোকান, আর ঝলমলে গয়নার পসরা—সবকিছুই পর্যটকদের মন জয় করে।
এখানকার সান্তা মারিয়া আস্সুন্তা ক্যাথেড্রালের (Cathedral of Santa Maria Assunta) স্থাপত্যশৈলীও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্থানীয়দের মতে, পোসিতানো ভ্রমণে তাড়াহুড়ো না করে এখানকার সকালের আলো উপভোগ করা উচিত।
এছাড়াও, ‘ডা’ অ্যাডলফো’র (Da Adolfo) মত জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলোতে হালকা খাবার ও স্থানীয় পানীয়র স্বাদ নেওয়া যেতে পারে।
২. আমালফি (Amalfi) : প্রাচীন নৌ-শক্তির কেন্দ্র।
একসময় শক্তিশালী নৌ-শক্তির কেন্দ্র ছিল আমালফি। এখানকার সমুদ্রতীর ধরে হেঁটে বেড়ানো, ক্যাফেতে বসে কফি পান করা, আর স্থানীয় হস্তশিল্পের দোকানগুলোতে ঘুরে বেড়ানো—এগুলো এখানকার প্রধান আকর্ষণ।
সেন্ট অ্যান্ড্রু ক্যাথেড্রাল (Cattedrale di Sant’Andrea) এবং এর আশেপাশে ঘুরে আসা আপনার ভ্রমণকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
৩. রাভেলো (Ravello) : পাহাড়ের চূড়ায় সৌন্দর্যের লীলাভূমি।
উঁচু পাহাড়ের উপরে অবস্থিত রাভেলো, অসাধারণ দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। এখানকার ভিলা রুফালো (Villa Rufolo) এবং ভিলা সিমব্রোনের (Villa Cimbrone) বাগানগুলোতে ঘুরতে যাওয়া এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
এখানকার ‘মুসো দেল কোরালো’ (Museo del Corallo) -তে (Coral Museum) রয়েছে নানান ধরনের ঐতিহাসিক কোরাল বা প্রবালের সংগ্রহ, যা পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয়।
৪. প্রেইয়ানো (Praiano) : শান্ত ও স্নিগ্ধ।
পোসিতানোর কাছেই অবস্থিত প্রেইয়ানো, অপেক্ষাকৃত শান্ত ও কম পরিচিত একটি জায়গা। এখানকার ‘বার দেল সোলে’ (Bar del Sole) -তে স্থানীয়দের সাথে সান্ধ্যকালীন আড্ডা উপভোগ করা যেতে পারে।
এছাড়াও, ‘ইল পিরাতা’ (Il Pirata) -র কাছে সমুদ্রের ধারে সাঁতার কাটার সুযোগও রয়েছে।
৫. ফুরোরে (Furore) : সুন্দর গ্রাম।
ফুরোরে, ইতালির সুন্দর গ্রামগুলোর মধ্যে একটি। এখানকার ফিয়র্ড (fjord) বা সমুদ্র খাঁড়ি, যা পাহাড়ের গা কেটে তৈরি হয়েছে, পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়।
এখানে নতুন ফুরোরে গ্র্যান্ড হোটেলে (Furore Grand Hotel) থাকার পাশাপাশি, ব্লু ফুরোরে (Bluh Furore) -র মত নামকরা রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার উপভোগ করা যেতে পারে।
৬. কনকা দেই মারিনি (Conca dei Marini) : সবুজ গুহার দেশ।
কনকা দেই মারিনি, এখানকার সবুজ গুহার জন্য পরিচিত। এখানকার ‘লা তনারেলা’ (La Tonnarella) -র মত রেস্টুরেন্টগুলোতে স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া যেতে পারে।
৭. আত্রানি (Atrani) : ইতালির ক্ষুদ্রতম শহর।
আত্রানি, ইতালির সবচেয়ে ছোট শহর। আমালফি থেকে হেঁটে এখানে যাওয়া যায়, যা প্রায় ১০ মিনিটের পথ। এই পথ ধরে হাঁটার সময় দুই শহরের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
৮. ভিয়েত্রি সল মেরে (Vietri sul Mare) : সিরামিকের শহর।
ভিয়েত্রি সল মেরে, সিরামিক শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানকার স্টুডিওগুলোতে স্থানীয় কারিগরদের তৈরি করা সিরামিকের কাজ দেখা যেতে পারে।
৯. স্ক্যালা (Scala) : স্থানীয় খাবারের স্বাদ।
স্ক্যালা-তে ‘দা লরেনজো’ (Da Lorenzo) -র মত রেস্টুরেন্টগুলো স্থানীয় খাবারের জন্য পরিচিত। এখানে তাজা খাবার পাওয়া যায়।
১০. নেরানো (Nerano) : শান্ত ও আকর্ষণীয়।
নিরানো, প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানোর জন্য একটি সুন্দর জায়গা। এখানকার ‘লো স্কোগলিও’ (Lo Scoglio) -তে দুপুরের খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা অসাধারণ হতে পারে।
এখানকার জুকিনি (zucchini) দিয়ে তৈরি স্প্যাগেটি (spaghetti) অনেকেরই প্রিয়।
আমানফি উপকূল, প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি। ইতালির এই সুন্দর উপকূল ভ্রমণ, নিঃসন্দেহে আপনার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার