আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদী মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, সেই ধারাবাহিকতায় এবার পরিচিত হওয়া যাক যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ গল্ফার জাস্টিন হেস্টিংসের সঙ্গে।
গল্ফ বিশ্বে অন্যতম সম্মানজনক টুর্নামেন্ট হলো ‘মাস্টার্স’। সম্প্রতি এই টুর্নামেন্টে একজন অপেশাদার গল্ফার হিসেবে খেলার সুযোগ পান ২১ বছর বয়সী জাস্টিন।
ক্যারিয়ারের শুরুতেই এমন একটা সুযোগ পাওয়া যেকোনো খেলোয়াড়ের কাছে স্বপ্নের মতো। জাস্টিনের জন্য এই অভিজ্ঞতা আরও বেশি বিশেষ ছিল কারণ তিনি ছিলেন একজন অপেশাদার খেলোয়াড়, এই বছর মাস্টার্স খেলতে আসা পাঁচজনের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র জাস্টিন, লাতিন আমেরিকা অ্যামেচার চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে এই টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় জয়লাভের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস ওপেন’-এ খেলারও সুযোগ পান।
প্রতি বছর এপ্রিল মাসে বিশ্বসেরা গল্ফাররা তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য ‘আগাস্টা ন্যাশনাল’-এ জড়ো হন। তাদের সবার লক্ষ্য থাকে রেকর্ড বইয়ে নিজেদের নাম লেখানো এবং কাঙ্ক্ষিত ‘সবুজ জ্যাকেট’ জয় করা।
জাস্টিন জানান, মাস্টার্সে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন এবং এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।
একজন অপেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে এত বড় প্রতিযোগিতায় নামাটা কেমন ছিল? মিডিয়ার আলো, কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলা এবং কঠিনতম কোর্সে টিকে থাকার চাপ—সবকিছু সামলে তিনি কিভাবে নিজের খেলাটা চালিয়ে গেছেন?
জাস্টিন বলেন, “নিজের খেলার দিকে মনোযোগ দিতে হবে, যা নিয়ন্ত্রণে আছে, সেদিকেই নজর রাখতে হবে। স্কোর আপনাআপনিই ভালো হবে।”
তবে শুরুতে এই পরামর্শ নিজের জন্য অনুসরণ করা সহজ ছিল না। মাস্টার্স টুর্নামেন্টের শুরুতে ‘ম্যাগনোলিয়া লেন’-এর দিকে প্রথমবার হাঁটা তার শৈশবের অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
ছোটবেলা থেকেই গল্ফের প্রতি ভালোবাসা ছিল জাস্টিনের। মাস্টার্স টুর্নামেন্ট নিয়ে তার এতটাই উন্মাদনা ছিল যে, স্কুল ফাঁকি দেওয়ার জন্য নাকি তিনি অসুস্থতার ভান করতেন।
জাস্টিন বলেন, “ছোটবেলা থেকে আমার কাছে মাস্টার্স ছিল অন্যরকম একটা টুর্নামেন্ট। যখনই মাস্টার্সের খেলা শুরু হতো, আমি টিভিতে খেলা দেখার জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ার ভান করতাম। মা-বাবা বিষয়টি ধরে ফেললে, মাস্টার্সের বৃহস্পতিবার আমাদের পরিবারের জন্য ছুটির দিন হয়ে যায়।”
অনুশীলন করার সময় নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন জাস্টিন।
তিনি বলেন, “মাথায় একটাই চিন্তা ছিল, কাউকে যেন আঘাত না করি।”
তবে এই নার্ভাসনেস খেলার মাঠে ভালো করতে সাহায্য করেছে।
প্রথম রাউন্ডে তিনি ৭৬ স্কোর করেন এবং দ্বিতীয় রাউন্ডে ৭২ স্কোর করে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের খুব কাছে পৌঁছে যান।
মাস্টার্স টুর্নামেন্টে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। জাস্টিন আগে কখনো এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হননি।
তিনি বলেন, “এটা আমার জন্য ছিল অসাধারণ একটা মুহূর্ত। একইসঙ্গে এটা আমাকে আরও ভালো খেলতে উৎসাহিত করেছে। আমি চাই, সবসময় যেন এমন দর্শকদের সামনে খেলতে পারি, এটাই তো আমার স্বপ্ন।
মাস্টার্সে অপেশাদার খেলোয়াড়দের কেমন মূল্যায়ন করা হয়?
জাস্টিন জানান, টুর্নামেন্ট কর্তৃপক্ষ তাকে রাজকীয় সম্মান দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমাকে তারা অনেক সম্মান দেখিয়েছে। গ্রিন জ্যাকেটের জন্য লড়াই করা বড় খেলোয়াড়দের মতো হয়তো নয়, তবে একজন অপেশাদার হিসেবে এতদূর আসার জন্য তারা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ ছিল। আমি যেন তাদের কাছে সবসময় সম্মানিত হয়েছি।
জাস্টিনের মতে, এই অভিজ্ঞতা তার জীবনের সেরা একটি মুহূর্ত ছিল।
তিনি ২০১৮ সালের মাস্টার্স জয়ী প্যাট্রিক রিডের সঙ্গে ৯ হোল খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। রিড তাকে নিজের খেলা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
প্রথম এবং দ্বিতীয় রাউন্ডে ডাস্টিন জনসন এবং কানাডার অভিজ্ঞ গল্ফার নিক টেলরের সঙ্গে খেলার সুযোগ হয় জাস্টিনের।
অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শগুলো তাকে আরও ভালো খেলতে সাহায্য করেছে।
তবে তার কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় ছিল ‘ক্রোস নেস্ট’-এ থাকার সুযোগ পাওয়া।
তিনি বলেন, “আমি যেন স্বপ্ন দেখছিলাম। জায়গাটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস।
গল্ফের কিংবদন্তিদের সঙ্গে আমার নামটাও যুক্ত হয়েছে, এটা ভেবে ভালো লাগছে।”
বর্তমানে জাস্টিনের প্রধান লক্ষ্য ইউএস ওপেন।
মাস্টার্সের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি এই টুর্নামেন্টে ভালো ফল করতে চান।
তিনি বলেন, “মাস্টার্সে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি আমি অনুভব করেছি, এখানে ভালো করার মতো যোগ্যতা আমার আছে।”
ওকмонт-এর কঠিন পরিস্থিতিতে ভালো খেলার জন্য মুখিয়ে আছেন জাস্টিন।
তিনি বলেন, “আমি সেখানে গিয়ে আমার সেরাটা দিতে চাই এবং দেখতে চাই, শেষ পর্যন্ত আমি কোথায় দাঁড়াই।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন