ব্রাজিলের অ্যামাজন বৃষ্টিবন, যা পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত, সেখানে গরু পালন করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। মাংস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিছু অসাধু উপায়ে এই ধ্বংসযজ্ঞকে আরও বাড়িয়ে তুলছে, যা পরিবেশের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের কারণ।
বিশ্বের বৃহত্তম মাংস রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ব্রাজিলের গরুর মাংসের চাহিদা অনেক। আর এই চাহিদার যোগান দিতে গিয়েই ঘটছে বিপত্তি।
অ্যামাজনে গরুর খামার তৈরির জন্য ব্যাপক হারে বনভূমি পরিষ্কার করা হচ্ছে। এখানকার মোট গবাদি পশুর ৪০ শতাংশেরও বেশি পালন করা হয় এই অঞ্চলে।
বনভূমি ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের গতিও বাড়ছে। পরিবেশবিদ ও ভোক্তারা এখন বনভূমি ধ্বংস না করে উৎপাদিত মাংসের দিকে ঝুঁকছেন।
কিন্তু মাংসের সরবরাহ শৃঙ্খলে জটিলতা থাকায় অনেক সময় আসল বিষয়টি বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।
গরুগুলো জন্ম থেকে শুরু করে কসাইখানায় আসার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন খামারে ঘুরে বেড়ায়। মাংস প্রক্রিয়াকরণকারী বড় কোম্পানি, যেমন – জেবিএস (JBS), এর কাছে পৌঁছানোর আগে গরুটি হয়তো তার জীবনের ৭৫ শতাংশ সময় অন্য খামারে কাটায়।
এই পর্যায়ে নজরদারির অভাবে “ক্যাटल লন্ডারিং”-এর মতো ঘটনা ঘটে, যেখানে অবৈধ বা বনভূমি ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত খামার থেকে আসা গরুকে বৈধ খামারের গরুর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
ব্রাজিলের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা, “আইবামার” (IBAMA), বনভূমি ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত খামারগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে থাকে।
কিন্তু ভোক্তারা কিভাবে নিশ্চিত হবেন যে, তাদের কেনা গরুর মাংস বনভূমি ধ্বংসের কারণ হয়নি? পুরো সরবরাহ শৃঙ্খল অনুসরণ করার মতো ব্যবস্থা এখনো তৈরি হয়নি।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো গরুর মাংস যদি অ্যামাজন থেকে আসে, তাহলে উৎপাদক থেকে শুরু করে ভোক্তার প্লেট পর্যন্ত এর গতিপথ চিহ্নিত করা কঠিন। এই জটিলতা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
এই সমস্যাটি শুধু ব্রাজিলের একার নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বের প্রতিটি দেশকে পরিবেশ সুরক্ষায় আরও সচেতন হতে হবে।
বনভূমি ধ্বংসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং টেকসই মাংস উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান