আমাজন বন: ভয়াবহ পরিণতির ২৪ বছরের গবেষণা! কী ঘটল?

আর্টিকেল লেখার নির্দেশিকা অনুযায়ী, নিচে একটি নতুন বাংলা নিবন্ধ দেওয়া হলো:

শিরোনাম: আমাজন বৃষ্টিবনের ভবিষ্যৎ: জলবায়ু পরিবর্তনের এক দীর্ঘমেয়াদী পরীক্ষার ফল

ভূমিকা:
পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত আমাজন রেইনফরেস্ট বা বৃষ্টিবন। দক্ষিণ আমেরিকার এই বিশাল বনভূমি শুধু অক্সিজেন সরবরাহ করেই না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যদি এই বনভূমি শুকিয়ে যেতে শুরু করে, তাহলে কী হবে? সম্প্রতি হওয়া একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণার প্রেক্ষাপট:
ব্রাজিলের ক্যাক্সিয়ানা ন্যাশনাল ফরেস্টে (Caxiuana National Forest) ২০০০ সাল থেকে ‘এসেকাফ্লোর’ (Esecaflor) নামে একটি গবেষণা চলছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাজনের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেলে বনের ওপর তার প্রভাব কেমন হবে, তা পর্যবেক্ষণ করা। বিজ্ঞানীরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে কৃত্রিমভাবে খরা পরিস্থিতি তৈরি করেন।

প্রায় এক হেক্টর (প্রায় আড়াই একর) জমির ওপর ৬,০০০ স্বচ্ছ প্লাস্টিকের প্যানেল স্থাপন করে বৃষ্টির জল সরিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ওই এলাকার গাছপালাগুলো জলের অভাবে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে।

গবেষণার পদ্ধতি ও ফলাফল:
গবেষণার জন্য একটি অংশের পাশে একই রকম আরেকটি অংশ স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা হয়, যা ‘নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্র’ হিসেবে কাজ করে। উভয় স্থানে মাটির আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, গাছের বৃদ্ধি, এবং কার্বন শোষণের মতো বিষয়গুলো নিয়মিত পরিমাপ করা হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, খরা-প্রভাবিত অঞ্চলে গাছপালা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সেখানকার কার্বন ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

প্রায় আট বছর পর থেকে বনের ব্যাপক ক্ষতি হতে শুরু করে। গাছগুলো মরতে শুরু করে এবং সেখানকার জীববৈচিত্র্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব পড়ে। গবেষণায় দেখা যায়, ওই এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ গাছপালা ও তাদের মধ্যে জমা থাকা কার্বনের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ:
গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, খরা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ফলে বনভূমিটি সাভানা বা তৃণভূমি অঞ্চলে পরিণত হয়নি। আগেকার কিছু মডেলিং গবেষণায় এমনটা হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা আরও দেখেছেন, এক সময় কার্বন শোষক হিসেবে পরিচিত এই বনভূমি, গাছপালা ধ্বংসের কারণে ধীরে ধীরে কার্বন নির্গমনকারী অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা প্লাস্টিকের প্যানেলগুলো সরিয়ে ফেলেছেন এবং বনের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন। তাঁদের প্রধান লক্ষ্য হলো, বনটি আগের অবস্থায় ফিরতে পারে কিনা, তা দেখা। এই গবেষণার ফলাফল জলবায়ু পরিবর্তন এবং বনভূমি রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করে।

আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব:
আবহাওয়ার পরিবর্তন এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সম্প্রতি এল নিনোর (El Nino) প্রভাবে আমাজন বনে দেখা দেয় তীব্র খরা, যা সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

এর পাশাপাশি, পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মতো, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশেও বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন, এবং ঘন ঘন বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘটনাগুলো আমাদের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে। আমাজন বনের এই গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে এবং এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা আরও একবার মনে করিয়ে দেয়।

উপসংহার:
আমাজন বনের এই গবেষণা জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে, বনভূমি রক্ষার মাধ্যমে আমরা সবাই মিলে এই পৃথিবীর পরিবেশকে আরও বাসযোগ্য করে তুলতে পারি।

তথ্যসূত্র: Associated Press

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *