যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক: কাজ করতে ভয়, ঘরে থাকারও উপায় নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি, নির্মাণ ও আতিথেয়তা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে অভিবাসী শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সম্প্রতি অভিবাসন দপ্তর (আইস), সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি কঠোর করার ঘোষণার পর থেকে, এই শ্রমিকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন কর্মস্থলে আকস্মিক অভিযান চালানো হচ্ছে, যার ফলে অনেক শ্রমিক কাজ করতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের মধ্যে যারা কাগজপত্রবিহীন, তাদের মধ্যে এই আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি।
ক্যালিফোর্নিয়ার অক্সনার্ডের একটি ঘটনা এর জ্বলন্ত উদাহরণ। সেখানে, কৃষি জমিতে কাজ করার সময়, আইস এজেন্টরা শ্রমিকদের ধাওয়া করে এবং আটক করে।
এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা তাদের কাজ হারানোর পাশাপাশি দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতেও পড়ছেন।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকান বিজনেস ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা শি’র মতে, “কর্মক্ষেত্রে সাম্প্রতিক অভিবাসন অভিযানগুলো স্থানীয় অর্থনীতি, সমাজ এবং অভিবাসী শ্রমের উপর নির্ভরশীল শিল্পগুলির জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট শ্রমশক্তির ৪ থেকে ৫ শতাংশ অভিবাসী, যাদের অনেকেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। তবে কিছু শিল্পে, যেমন কৃষি ও নির্মাণ খাতে, এই সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বা তার বেশি।
কর্মীদের এই উদ্বেগের কারণ হলো, কাজ বন্ধ করে দিলে তাদের পরিবারকে দেখাশোনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ থাকবে না।
তাদের ঘর ভাড়া দিতে হবে, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে হবে, কাপড় কিনতে হবে এবং পরিবারের অন্যান্য খরচও বহন করতে হবে।
তবে, কর্তৃপক্ষের এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপের কারণে অনেক ব্যবসার মালিকও চিন্তিত। কারণ, শ্রমিকদের অভাবে তাদের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “শহরের অর্থনীতিতে অভিবাসী সম্প্রদায়ের অবদান অপরিহার্য। যদি অভিবাসী শ্রমিকরা কাজে যেতে ভয় পান, তাহলে অর্থনীতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাত অচল হয়ে পড়বে।
হোম ডিপোর মতো দোকানে শ্রমিক আটকের ঘটনা ইতোমধ্যেই বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। নির্মাণ শ্রমিকরা প্রায়ই কাজের জন্য এই দোকানগুলোর বাইরে জড়ো হন।
এই পরিস্থিতিতে, অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং তাদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এখন জরুরি।
একই সাথে, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন