যুক্তরাষ্ট্রে আবাসন বাজারে ‘গোপন তালিকা’ নিয়ে ব্রোকারদের মধ্যে চলছে লড়াই।
যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির বেচাকেনার বাজারে এখন নতুন এক বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। বিষয়টি হলো, বাড়ি বিক্রির আগে কিছু ব্রোকার তাদের নিজস্ব ‘গোপন তালিকা’ তৈরি করছে। এই ধরনের তালিকায় থাকা বাড়িগুলো প্রথমে প্রকাশ্যে আনা হয় না, বরং ব্রোকারের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সীমিত সংখ্যক ক্রেতার কাছে উপস্থাপন করা হয়।
এই গোপন তালিকা নিয়ে দেশটির বৃহৎ রিয়েল এস্টেট ব্রোকার কোম্পানিগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ একে ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর বলছেন, আবার কারো মতে এটি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই উপকারী।
ব্যাপারটা একটু খোলসা করে বলা যাক। সাধারণত, যখন কোনো বাড়ির মালিক তার বাড়ি বিক্রি করতে চান, তখন তিনি একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্টের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘রিয়েলটর’ নামে পরিচিত) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এজেন্ট তখন বাড়িটির ছবি তোলেন, বর্ণনা লেখেন এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত করেন, যেমন Zillow বা Redfin।
এর মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতারা বাড়িটি সম্পর্কে জানতে পারেন। কিন্তু ‘গোপন তালিকা’ পদ্ধতিতে, এই কাজটি একটু ভিন্নভাবে করা হয়। এক্ষেত্রে, তালিকাটি প্রথমে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় না। বরং, ব্রোকারের নিজস্ব নেটওয়ার্কে থাকা এজেন্টদের মাধ্যমে এটি সীমিত সংখ্যক ক্রেতার কাছে উপস্থাপন করা হয়।
এই পদ্ধতির প্রধান সুবিধা হলো, বাড়ির মালিকরা চান তাদের বাড়িটি দ্রুত বিক্রি হোক এবং সেটির ভালো দাম পাওয়া যাক। গোপন তালিকার মাধ্যমে, তারা প্রথমে কিছু নির্বাচিত ক্রেতার কাছে অফার পান এবং তাদের মধ্যে দাম নিয়ে দর কষাকষি করার সুযোগ পান।
কিন্তু এই পদ্ধতির কিছু সমস্যাও রয়েছে। সমালোচকদের মতে, গোপন তালিকা বাজারের স্বচ্ছতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে, অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা বাড়িটি সম্পর্কে জানতে পারেন না এবং প্রতিযোগিতার অভাবে বাড়ির মালিকরা হয়তো সেরা দাম থেকে বঞ্চিত হন।
এছাড়া, গোপন তালিকার কারণে ব্রোকাররা উভয় পক্ষের কাছ থেকে কমিশন পাওয়ার সুযোগ পান, যা তাদের স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ রিয়েল এস্টেট ব্রোকার কোম্পানি Compass এই গোপন তালিকা পদ্ধতির বিস্তর ব্যবহার করে। তারা তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য ‘Compass Private Exclusive’ নামে একটি বিশেষ ব্যবস্থা চালু করেছে। এর মাধ্যমে, বাড়ির মালিকরা তাদের বাড়ি প্রথমে গোপনে তালিকাভুক্ত করতে পারেন।
Compass দাবি করে, এর ফলে তারা তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য ভালো ডিল করতে পারে।
অন্যদিকে, eXp Realty-এর মতো কিছু ব্রোকার কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিও পারেজা এই পদ্ধতির তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, এটি ভোক্তাদের অধিকারের পরিপন্থী এবং বাজারের জন্য ক্ষতিকর। তার মতে, একটি বাড়ির তালিকা সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত, যাতে বেশি সংখ্যক ক্রেতা সে সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ন্যায্য দাম পাওয়া যায়।
এই বিতর্কের মধ্যে, Zillow এবং Redfin-এর মতো জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে। তারা এখন বলছে, যদি কোনো বাড়ির তালিকা অন্য কোথাও (যেমন Compass-এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে) বিজ্ঞাপন আকারে দেখানো হয়, তবে সেটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের প্ল্যাটফর্মেও প্রকাশ করতে হবে।
এই নিয়ম Compass-এর গোপন তালিকা পদ্ধতির কার্যকারিতা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা কেইটলিন বিগেলো নামের একজন নারী তার বাড়ির বিক্রির অভিজ্ঞতা থেকে বিষয়টি বুঝতে পারেন। তিনি জানান, প্রথমে তিনি Compass-এর মাধ্যমে গোপন তালিকা পদ্ধতিতে তার বাড়ি বিক্রি করতে রাজি হয়েছিলেন। তিনি একটি ভালো দামও পেয়েছিলেন।
কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন, যদি আরও বেশি মানুষ তার বাড়িটি সম্পর্কে জানতে পারত, তাহলে হয়তো তিনি আরও বেশি দাম পেতে পারতেন।
এই বিতর্কের কারণ হলো, আবাসন বাজার একটি বিশাল ব্যবসা। এখানে কোটি কোটি ডলারের লেনদেন হয়। তাই, ব্রোকাররা তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য সেরা ডিল নিশ্চিত করতে চান।
তবে, সেই ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করাটাও জরুরি।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাজারের এই বিতর্ক বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভবিষ্যতে, এই ধরনের গোপন তালিকা পদ্ধতির ব্যবহার বাড়বে নাকি কমবে, সেটি দেখার বিষয়।
তবে, একটি বিষয় নিশ্চিত যে, ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বাজারের স্বচ্ছতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: CNN