আমেরিকান অর্থনীতি: দুঃশ্চিন্তা ও শুল্কের কোপে ভোক্তারা?

মার্কিন অর্থনীতিতে এখন কিছুটা অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ভোক্তাদের আস্থা কমছে, ঋণের বোঝা বাড়ছে, এবং তাদের মধ্যে চাকরি হারানোর দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ফলে, তারা কিছু ক্ষেত্রে খরচ কমাচ্ছে। যদিও অর্থনীতির মূল ভিত্তি এখনো মজবুত আছে, ঝুঁকির পরিমাণ বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তাদের উপর চাপ বাড়ছে, যা তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির অনিশ্চয়তা, যার মধ্যে রয়েছে বিশাল শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা, যা দাম বাড়াতে পারে এবং বিনিয়োগের পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে মানুষের মধ্যে খরচ করার প্রবণতা কমছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমেরিকান ভোক্তারা আগামী দিনের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে ভোক্তাদের ব্যয় মাত্র ০.১ শতাংশ বেড়েছে, কারণ আমেরিকানরা তাদের সঞ্চয় বাড়িয়েছেন। মার্চ মাসে ভোক্তা আস্থা ১২ শতাংশ কমেছে।

ভোক্তা ব্যয় মার্কিন অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি। তাই এই ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখা দিলে, এর গুরুতর অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, মানুষের মধ্যে খরচ করার মতো মানসিকতা ও আর্থিক সামর্থ্য দুটোই থাকতে হয়। বর্তমানে মানুষের মানসিকতার অভাব দেখা যাচ্ছে, অন্যদিকে আয়ও কমে আসছে।

যদিও সরকারি হিসাব অনুযায়ী, টানা দ্বিতীয় মাসের মতো ব্যক্তিগত আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তবে করের পরে প্রকৃত আয় (মুদ্রাস্ফীতি সমন্বিত) বছরে মাত্র ১.৮ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি খুবই দুর্বল একটা চিত্র।

যদি মানুষের হাতে খরচ করার মতো টাকা কমে যায় এবং তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যয়ের পরিমাণও কমবে। তবে, এটা পরিষ্কার নয় যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির দুর্বল ব্যয়ের কারণ হলো মন্দা বা মূল্যস্ফীতির ভয়, নাকি গত বছরের শেষ মাসগুলোতে কেনাকাটার অতিরিক্ত চাহিদার কারণে এমনটা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মজুরি এখনো মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে এবং শ্রমবাজার স্থিতিশীল থাকায় সামগ্রিক আয়ের প্রবৃদ্ধি ভালো রয়েছে। তবে, কর্মসংস্থান বাজারের স্থিতিশীলতার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি এই বাজারে কোনো পরিবর্তন আসে, তাহলে ভোক্তারা খরচ কমানোর দিকে ঝুঁকতে পারে। তবে, পরিবারের জন্য আয়ের বিষয়টি এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, সব পরিবারের ক্ষেত্রে এমনটা নাও হতে পারে। মহামারী পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, আমেরিকার পরিবারগুলোর মধ্যে আর্থিক বৈষম্য বাড়ছে। কম আয়ের এবং কম বয়সী ভোক্তারা বেশি সমস্যায় পড়ছেন। তাদের জীবনযাত্রা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে এবং শুল্কের চাপ তাদের উপর বেশি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে বকেয়া ঋণের পরিমাণও। কম আয়ের এবং কম বয়সী ঋণগ্রহীতারা এই বকেয়া ঋণের হার বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে। তাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা কমে গেছে। তবে, বৃহৎ পর্যায়ে, ভোক্তাদের বন্ধকী ঋণের স্বাস্থ্য উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো অবস্থানে আছে, যা সামগ্রিক পরিবারের ঋণের একটি বড় অংশ। বন্ধকী ঋণের পরিমাণ এখনো প্রাক-কোভিড স্তরের কাছাকাছি, যখন এটি ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল।

তবে, অনিশ্চয়তা দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকলে, এটি মানুষ ও ব্যবসার আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, শুল্কের কারণে মানুষের মধ্যে খরচ করার প্রবণতা কমে যেতে পারে, নাকি এটি দুর্বলতার নতুন লক্ষণ, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মন্দা এখনো তাদের প্রধান উদ্বেগের কারণ নয়, তবে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিকল্প হিসেবে, ব্যবসা, পরিবার এবং ফেডারেল রিজার্ভের মধ্যে সবাই ‘অপেক্ষা ও দেখা’ নীতি গ্রহণ করেছে। তাদের মতে, পরিস্থিতি খুব বেশি খারাপের দিকে যায়নি, তবে এই অনিশ্চয়তা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে তা উদ্বেগের কারণ হবে।

একজন ব্যবসায়ীর মতে, মানুষের হাতে যদি কাজ না থাকে, তাহলে তারা খরচ করতে পারবে না। উদাহরণস্বরূপ, কেনটাকির একটি ডিস্টিলারির মালিক জানিয়েছেন, তাদের ব্যবসার পণ্য মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে পড়ে না। তাই, মানুষের হাতে অর্থ না থাকলে তাদের ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *