জার্মানিতে জন্ম, যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা: এরপরও জামাইকাতে কেন এই আমেরিকান?

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে জন্ম, অবশেষে জামাইকাতে ঠাঁই, পরিচয়হীন এক ব্যক্তির করুন পরিণতি।

জার্মানিতে অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক হাসপাতালে জন্ম নেওয়া এক ব্যক্তি, যাঁর বাবা ছিলেন মার্কিন সেনা এবং মা কেনিয়ার নাগরিক, শেষ পর্যন্ত অপ্রত্যাশিতভাবে জামাইকাতে নির্বাসিত হয়েছেন। জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্বের দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও, আইনি জটিলতার কারণে তিনি এখন কোনো দেশেরই নাগরিক নন।

এই ব্যক্তির নাম জার্মেইন থমাস।

৩৮ বছর বয়সী জার্মেইন, যিনি এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে বসবাস করতেন, বর্তমানে জামাইকার কিংস্টনের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মাদক রাখা, চুরি এবং সহিংসতার মতো অপরাধের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক কর্তৃপক্ষ (আইস) তাঁকে এই কারণে জামাইকাতে ফেরত পাঠায়।

থমাসের জন্ম হয় ১৯৮৬ সালে, ফ্রাঙ্কফুর্টে অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক হাসপাতালে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন মার্কিন সেনা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাঁরা কখনোই ভাবেননি জার্মেইনের নাগরিকত্ব নিয়ে কোনো সমস্যা হতে পারে।

কারণ, তিনি একজন মার্কিন নাগরিকের সন্তান এবং জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির বাসিন্দা ছিলেন।

কিন্তু ২০০৮ সালে, মাদক মামলায় কারাদণ্ডের পর যখন তাঁকে আটক করা হয়, তখনই তাঁর জীবনে ছন্দপতন ঘটে। এরপর থেকে তিনি নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে আইনি লড়াই চালিয়ে যান। যদিও ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বিপক্ষে রায় দেয়।

আদালতের যুক্তি ছিল, জার্মেইনের জন্ম মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হওয়ায়, এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড হিসেবে গণ্য করা যায় না। ফলে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন।

এদিকে, জামাইকাতে আসার পর থমাস সেখানকার জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। তাঁর ভাষাগত সমস্যা রয়েছে, কারণ তিনি ইংরেজি-ভিত্তিক একটি ক্রেওল ভাষা বুঝতে পারেন না। আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য ও নিরাপত্তা সংকট তো রয়েছেই।

বর্তমানে তিনি কোনো কাজ করতে পারছেন না, কারণ তাঁর কোনো বৈধ পরিচয়পত্র নেই।

থমাসের পরিবারের সদস্যরাও তাঁর এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন। তাঁরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার ভয়ে তাঁরা জামাইকাতে যেতে পারছেন না। থমাসের এক আত্মীয় জানান, “মনে হচ্ছে আমি তাঁকে চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেলেছি।”

যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময়ে থমাস বাইপোলার স্কিজোঅফেকটিভ ডিসঅর্ডারে (bipolar type of schizoaffective disorder) ভুগছিলেন এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন করতেন। জামাইকাতে আসার পর তাঁর সেই ওষুধও ফুরিয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী বেটসি ফিশার জানান, থমাসের মতো পরিচয়হীন মানুষেরা খুবই অসহায় অবস্থায় থাকে। কারণ, কোনো দেশই তাদের নিজের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)-এর মতে, বিশ্বে বর্তমানে কয়েক লক্ষ মানুষ রাষ্ট্রহীন অবস্থায় জীবন যাপন করছেন।

থমাসের এই ঘটনা, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির জটিলতা এবং একজন মানুষের নাগরিকত্বের অধিকার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলে। বর্তমানে তিনি তাঁর জন্মভূমির বাইরে, অচেনা একটি দেশে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *