মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। একসময় ‘আমেরিকান ড্রিম’-এর হাতছানিতে বহু মানুষ পাড়ি জমাতেন যুক্তরাষ্ট্রে, উন্নত জীবনের আশায়। কিন্তু বর্তমানে অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেকের কাছেই যুক্তরাষ্ট্রের আকর্ষণ কমছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমীক্ষায় এমনটাই উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী কঠোর নীতি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার আমলে অভিবাসীদের গণহারে বিতাড়িত করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা এখনো অনেকের মনে ভীতি জাগায়।
এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা বৈধ অভিবাসীরাও ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া নীতির শিকার হয়েছেন। অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীও এখন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগ হারাচ্ছেন, বিশেষ করে যারা ফিলিস্তিন ইস্যুতে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক বিদেশি। বিশেষ করে পর্যটন, বাণিজ্য, শিক্ষা ও বিনোদন খাতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপে দেখা গেছে, গত এক বছরে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ২৪টি দেশের মধ্যে ১৫টিতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, দেশটির জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। গত বছর অভিবাসনের কারণে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধি ছিল বিগত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এই সময়ে প্রায় ২৮ লক্ষ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন গ্রহণ করেছেন। তবে, অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বরাবরই নেতিবাচক। তিনি একে ‘অনুপ্রবেশ’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছেন।
অন্যদিকে, বিশ্বের অনেক দেশই এখন অভিবাসীদের জন্য তাদের দরজা খুলে দিচ্ছে। ডেনমার্কের মতো দেশগুলো অভিবাসনকে উৎসাহিত করছে। এমনকি, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছেও যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো আকর্ষণীয় গন্তব্য নয়।
নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক একটি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে দর্শক সংখ্যা কমেছে। ফলে, অনেকেই এখন যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে পড়াশোনার আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসন প্রত্যাশী এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার অভাব তৈরি হয়েছে। কারণ, তারা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য এমন একটি দেশ বেছে নিতে চান যেখানে স্থিতিশীলতা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নিয়ে এই পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কাজের জন্য বা উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমান।
তাদের মধ্যে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে একটি পছন্দের গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করেন। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির পরিবর্তন এবং দেশটির প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, এই উভয় বিষয়ই বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস