ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে মেক্সিকোতে: কেন এক মার্কিন মহিলার এই সিদ্ধান্ত?

ক্যালিফোর্নিয়ার জীবন: উচ্চ আকাঙ্ক্ষা আর আর্থিক টানাপোড়েনের গল্প।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে জীবন কাটানো, বিশেষ করে যাদের তিনটি সন্তান রয়েছে, তাদের জন্য অনেক সময়টা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এমনটাই অনুভব করতেন জ্যানেট ব্লাসার।

অন্যদিকে বিল পরিশোধের দুশ্চিন্তা, অন্যদিকে নিজের অপূর্ণতা—এসবের মাঝে জর্জরিত ছিলেন তিনি। কিন্তু সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে, জীবনের নতুন দিগন্তের খোঁজে প্রায় দুই দশক আগে মেক্সিকোতে পাড়ি জমান এই মার্কিন নারী।

জ্যানেট জানান, ক্যালিফোর্নিয়ায় দিন আনা দিন খাওয়া জীবন থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন তিনি। মায়ের অসুস্থতা এবং জীবনের অন্তিম সময়ে তার কিছু অপূর্ণতার কথা জ্যানেটকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছিল।

মায়ের সেই না-করা কাজগুলোর আফসোস যেন জ্যানেটের মনে গভীর রেখাপাত করে।

৫০ বছর বয়সে জ্যানেট যখন পেশাগত দিক থেকে নতুন কিছু করার কথা ভাবছিলেন, তখন তিনি অনুভব করেন, পুরনো চাকরির বাজারে তার কদর কমে আসছে। একদিকে সন্তানদের বড় করে তোলার চাপ, অন্যদিকে নিজের বাড়ি না থাকার হতাশা—সবকিছু মিলে তিনি যেন এক অদৃশ্য জগতে বন্দী হয়ে পড়েছিলেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশছোঁয়া বাড়ির দাম তাকে হতাশ করত, মনে হতো যেন তিনি সমাজের চোখে মূল্যহীন।

এরপরই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে, তিনি মেক্সিকোর মাজatlan শহরে ঘুরতে যান।

সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সেখানকার মানুষের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে যান জ্যানেট। কোবস্টোন পাথরের রাস্তা, পুরনো বাড়িগুলো—সবকিছু যেন তাকে আপন করে নেয়।

১০ দিন সেখানকার জীবনযাত্রা অনুভব করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এই শহরেই তিনি নতুন করে বাঁচতে চান।

জ্যানেট জানান, তিনি চেয়েছিলেন এমন একটি জীবন যেখানে তিনি কাজ করতে পারবেন এবং একইসাথে নিজের ভালো লাগার একটি জগৎ তৈরি করতে পারবেন।

তাই তিনি মাজatlan-এ বসবাস করা আমেরিকান এবং কানাডিয়ানদের জন্য একটি ইংরেজি ম্যাগাজিন প্রকাশ করার পরিকল্পনা করেন।

এরপর শুরু হয় তার নতুন জীবনের প্রস্তুতি। ৬ মাস ধরে তিনি মাজatlan সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করেন। এরপর সেখানে এক মাস থেকে সেখানকার জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা নেন।

জ্যানেট নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন, সেখানে তিনি ভালোভাবে বাঁচতে পারবেন কিনা।

২০০৬ সালের জানুয়ারিতে, জ্যানেট তার জিনিসপত্র একটি ছোট গাড়িতে ভরে মাজatlan অভিমুখে যাত্রা করেন। শুরুতে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছিল তার।

তিনি জানান, দীর্ঘ চার দিন ধরে তিনি কেঁদেছিলেন, কারণ তিনি সবকিছু ছেড়ে আসছিলেন।

কিন্তু মাজatlan পৌঁছানোর পর সবকিছু যেন তার কাছে পরিচিত মনে হতে শুরু করে। সেখানকার স্থানীয় মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, সেখানকার সংস্কৃতি—সবকিছু তাকে মুগ্ধ করে। তিনি সহজেই সেখানকার মানুষের সঙ্গে মিশে যান।

জ্যানেট দ্রুতই সেখানকার জীবনযাত্রার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। সেখানকার উষ্ণ আবহাওয়া, জীবন ধারণের সহজ পদ্ধতি এবং বন্ধুভাবাপন্ন মানুষের কারণে তিনি নতুন করে বাঁচতে শুরু করেন।

তিনি জানান, সেখানকার জীবনযাত্রা তাকে আনন্দ দিয়েছে, যা আগে ক্যালিফোর্নিয়ায় ছিল না।

আর্থিক দিক থেকেও তিনি স্বস্তি পান। সেখানে তার মাসিক ভাড়াও ছিল খুবই কম। প্রথম কয়েক বছর তিনি ২৫০ ডলারের নিচে ভাড়া পরিশোধ করেছেন, যা তার মানসিক শান্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

শুরুর দিকে, জ্যানেটকে সেখানকার ভাষা শিখতে এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। বিশেষ করে মেক্সিকান নারীদের সাজসজ্জা দেখে তিনি বেশ অবাক হয়েছিলেন।

তবে ধীরে ধীরে তিনি সেখানকার জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেন। মাজatlan-এ আসার দুই থেকে তিন বছর পর তিনি সেখানকার জীবনকে পুরোপুরি উপভোগ করতে শুরু করেন।

তিনি সেখানকার সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে শুরু করেন এবং সেখানকার মানুষের সঙ্গে হাসিখুশিভাবে মিশে যান।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জ্যানেট বলেন, “আমি সব সময় মনে করতাম আমার যথেষ্ট নেই।”

কিন্তু মেক্সিকোতে এসে তিনি অনুভব করেন, তিনি সফল হয়েছেন। তিনি সেখানে একটি ব্যবসা শুরু করেন, একটি কৃষক বাজার তৈরি করেন, যা আজও চলছে।

বর্তমানে জ্যানেট মাজatlan-এ একটি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন, যার মাসিক ভাড়া প্রায় ৫৫০ ডলার। তিনি নিয়মিতভাবে তার সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে যুক্তরাষ্ট্রে যান।

তবে সেখানকার জীবনযাত্রা এখন তার কাছে কিছুটা অপরিচিত লাগে। জ্যানেট মনে করেন, মেক্সিকোতে আসার আগে তিনি যে জীবন যাপন করতেন, তা হয়তো এতটা আনন্দের হতো না।

মেক্সিকোতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে জ্যানেটের পরামর্শ হলো— সবকিছু ভালোভাবে জেনে-বুঝে এখানে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, “নিজের হৃদয়কে অনুসরণ করুন এবং একটি জীবন তৈরি করুন।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *