মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অভিবাসন আইন কঠোর করার উদ্বেগের মধ্যে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আমেরিকান নাগরিকত্ব লাভের জন্য যুক্তরাজ্যের দিকে ঝুঁকছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক আমেরিকান ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এই সময়ে প্রায় ১,৯৩১ জন আমেরিকান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন, যা ২০০৪ সাল থেকে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ সংখ্যা। আগের তিন মাসের তুলনায় এই সংখ্যা ১২ শতাংশ বেশি।
এছাড়া, গত বছর, স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে আসা মার্কিন নাগরিকদের সংখ্যাও অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন এমন মার্কিন নাগরিকের সংখ্যা ছিল ৫,৫০০ জনেরও বেশি, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর প্রধান কারণ হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে অনেক নাগরিকের মধ্যে তৈরি হওয়া হতাশা। কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেকে অসন্তুষ্ট ছিলেন।
এছাড়াও, উচ্চ করের হার অনেককে নাগরিকত্ব ত্যাগে উৎসাহিত করেছে। এমনকি, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময়েও, অর্থাৎ ২০২০ সালে, নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ৫,৮০০ জনের বেশি আমেরিকান তাদের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন, যা ২০১৯ সালের পুরো সময়ের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। এই প্রবণতা এখন আরও বাড়ছে।
নিউইয়র্ক ও লন্ডনে অবস্থিত সীমান্ত-বিষয়ক কর পরামর্শক সংস্থা বামব্রিজ অ্যাকাউন্ট্যান্টস-এর মতে, এই সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। সংস্থাটির একজন অংশীদার, অ্যালিস্টার বামব্রিজ-এর মতে, মূলত যারা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন, তারাই এখন সেখানকার পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাইছেন।
যুক্তরাজ্যে অভিবাসন আইন আরও কঠোর হতে চলেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার সম্প্রতি জানিয়েছেন, অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য নিয়মকানুন আরও কঠিন করা হবে এবং নাগরিকত্বের জন্য অপেক্ষা করার সময়সীমাও বাড়ানো হবে।
ইতালিতেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশটির সরকার সম্প্রতি একটি আইন প্রণয়ন করেছে, যেখানে তাদের পূর্বপুরুষের সূত্রে নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। এর আগে, দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বহির্ভূত নাগরিকদের জন্য ভিসার নিয়মকানুনও কঠোর করে।
যুক্তরাজ্য এবং ইতালির অভিবাসন আইন কঠোর করার এই সিদ্ধান্ত, যারা উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে পাড়ি জমাতে চান, তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের জন্য এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।
যদিও এই মুহূর্তে সরাসরি কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না, তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব লাভের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন