যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরগুলোতে দূষণ কমাতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো কি অব্যাহত থাকবে?
লস অ্যাঞ্জেলেস, মার্চ ২০২৪: আমেরিকার বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরে দূষণ কমানোর জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলো এখন প্রশ্নের মুখে। বন্দরের আশেপাশে বসবাসকারী বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণে জো বাইডেন প্রশাসন একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছিল।
কিন্তু প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে সেই পদক্ষেপগুলো দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস এবং লং বিচ বন্দরের কাছে অবস্থিত এলাকাগুলোতে দূষণের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। কার্বন নিঃসরণ কমাতে বাইডেন প্রশাসন ৩ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল ঘোষণা করেছিল।
এই অর্থে, পুরনো এবং বেশি দূষণ সৃষ্টিকারী সরঞ্জাম সরিয়ে সেখানে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি স্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, সমুদ্রবন্দরের মালপত্র পরিবহনের জন্য ডিজেল-চালিত ট্রাকের বদলে ইলেক্ট্রিক ট্রাক ব্যবহারের কথা ভাবা হয়েছিল।
এছাড়া, অনেক জাহাজ বন্দরে ভেড়ার পর তাদের নিজস্ব জেনারেটর ব্যবহারের পরিবর্তে বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা করারও পরিকল্পনা ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা থেরাল গোল্ডেন, যিনি ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে লং বিচ এলাকায় বসবাস করছেন, তিনি বলেন, “বন্দরের কার্যক্রমের কারণে আমাদের এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।” তিনি এখানকার মহাসড়কগুলোতে চলাচলকারী ট্রাকগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “এগুলো সবই পণ্য পরিবহনের অংশ, তাই এর দূষণ কমাতে হবে।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে জলবায়ু নীতি পরিবর্তনের কারণে এই তহবিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প তার আগের সরকারের জলবায়ু নীতিগুলোর সমালোচনা করে “জ্বালানি আধিপত্যের” পক্ষে কথা বলেছেন।
ফলে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, যেমন— পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, বাতাস ও পানির গুণগত মান উন্নয়ন এবং পরিবেশগত ন্যায়বিচার বিষয়ক নীতিগুলো দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমনকি, ফেডারেল সরকারের দেওয়া তহবিল বাতিল করারও আশঙ্কা রয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) জানিয়েছে, তারা অবকাঠামো বিষয়ক আইন ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইনের অধীনে অনুদান গ্রহণকারীদের জন্য পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট চালু করেছে, যাতে তহবিল পাওয়া সহজ হয়। তবে, অনেক বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনো ফেডারেল অনুদানের পর্যালোচনার জন্য অপেক্ষা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০০টি বাণিজ্যিক বন্দরে কয়েক দশক ধরে দূষণ একটি বড় সমস্যা। এই বন্দরগুলোতে কার, নির্মাণ সামগ্রী, এমনকি ফলের রস— এইসব পণ্য পরিবহনের জন্য ডিজেল-চালিত ক্রেন, ট্রাক ও লোকোমোটিভ ব্যবহার করা হয়, যা বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ করে।
এর ফলে হৃদরোগ, অ্যাজমা এবং মানুষের গড় আয়ু কমে যাওয়ার মতো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। ইপিএ-এর তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের কার্যক্রমের ফলে প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এদের মধ্যে বেশির ভাগই কম আয়ের এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।
কিছু বন্দরে দূষণ কমানোর জন্য রাজ্য সরকারের নিয়মকানুন, ডিজেল দূষণ হ্রাস এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন বিষয়ক নিয়মাবলী অনুসরণ করা হচ্ছে। লস অ্যাঞ্জেলেস, লং বিচ, নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সির মতো কয়েকটি বন্দরে দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে জানা গেছে।
তবে, বন্দরগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখনো তারা প্রচুর পরিমাণে সালফার অক্সাইড, পার্টিকুলেট ম্যাটার, নাইট্রোজেন অক্সাইডসহ বিভিন্ন দূষিত পদার্থ নির্গত করছে। কিছু ক্ষেত্রে দূষণের পরিমাণ বেড়েছে।
স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি দূষণ নিয়ন্ত্রণের চলমান প্রচেষ্টাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। হিউস্টনের বাসিন্দা এরান্দি ট্রেভিনো, যিনি একটি সচেতনতামূলক সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, তিনি জানান, হিউস্টন বন্দরের দূষণের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষগুলো বলছে, তারা একদিকে যেমন স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহারের চাপ অনুভব করছে, তেমনি শ্রমিক অসন্তোষের কারণেও তারা আর্থিক চাপে রয়েছে। ইলেক্ট্রিক সরঞ্জাম ডিজেল-চালিত সরঞ্জামের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।
এছাড়াও, ইলেক্ট্রিক সরঞ্জাম চার্জ দেওয়ার জন্য বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় এবং বন্দরে তাদের জন্য বেশি জায়গারও প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ু দূষণ কমাতে না পারলে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বন্দরগুলোর দূষণ পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ অন্যান্য বন্দরগুলোতেও একই ধরনের দূষণ সমস্যা দেখা দিতে পারে, যদি পরিবেশ সুরক্ষার নিয়মকানুন সঠিকভাবে পালন করা না হয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস