আফ্রিকার ঘানার শিল্পী আমোআকো বোয়াফোর শিল্পকর্ম এখন বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। সম্প্রতি লন্ডনের গ্যাগোসিয়ান গ্যালারিতে তার প্রথম একক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
“আই ডু নট কাম টু ইউ বাই চান্স” শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ নারী ও পুরুষের জীবনকে কেন্দ্র করে আঁকা ছবিগুলো।
বোয়াফোর জন্ম ১৯৮৪ সালে, ঘানার রাজধানী আক্রায়। শৈশবে বাবার মৃত্যু হলে মায়ের কাছেই বড় হন তিনি।
মায়ের পরিশ্রমে তিনি বেড়ে উঠেছেন, যিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। ছোটবেলায় ছবি আঁকার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল।
আর্থিক অনটনের কারণে আর্ট স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি, তবে পরবর্তীতে টেনিস খেলার মাধ্যমে তিনি কিছুটা পরিচিতি পান।
একসময় মায়ের পরিচিত এক ব্যক্তি তার আর্ট কলেজের প্রথম বর্ষের খরচ দেন, এরপরই যেন তার শিল্পী জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
বোয়াফোর শিল্পী জীবনের শুরুটা ছিল বেশ কঠিন। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা ফাইন আর্টস একাডেমি থেকে ফাইন আর্টসে মাস্টার্স শেষ করার সময় আমেরিকান শিল্পী কেহিন্দে ওয়াইলি তার কাজ দেখেন এবং গ্যালারিতে দেখানোর পরামর্শ দেন।
এরপর ধীরে ধীরে তার খ্যাতি বাড়তে থাকে। ২০১৮ সালে তার কাজগুলো পরিচিতি পেতে শুরু করে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে, ক্রিস্টির নিলামে তার আঁকা ‘হ্যান্ডস আপ’ ছবিটি প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ হংকং ডলারে বিক্রি হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৩ কোটি টাকার সমান (১ হংকং ডলার = ১৩.০৫ টাকা)।
এরপর তিনি মিয়ামির রুবেল মিউজিয়ামে একটি রেসিডেন্সিতে অংশ নেন। লস অ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগোর গ্যালারিতেও তার কাজ প্রদর্শিত হয়েছে।
ফ্যাশন হাউস ডিয়রের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছেন। এমনকি তার আঁকা তিনটি ছবি ব্লু অরিজিন রকেটের বাইরের অংশে স্থাপন করে মহাকাশে পাঠানো হয়।
বোয়াফোর কাজে প্রায়শই তার বন্ধু, পরিবার এবং নিজেকে দেখা যায়। তিনি বলেন, “আমি কেন আমার মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করার সময় সেখানে থাকব না?”
তার চিত্রকর্মে সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে, যা দর্শকদের গভীরভাবে নাড়া দেয়।
শিল্পকলার বাইরেও বোয়াফোর আগ্রহ রয়েছে। তিনি তার নিজের একটি টেনিস একাডেমি তৈরি করতে চান এবং যুবকদের জন্য খেলাধুলার সুযোগ তৈরি করতে চান।
তিনি মনে করেন, ছবি আঁকা তাকে ভালো অনুভব করায় এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
আফ্রিকার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি বোয়াফোর গভীর টান রয়েছে। লন্ডনের গ্যালারিতে তার প্রদর্শনীতে ঘানার একটি উঠান তৈরি করা হয়েছে।
এই উঠানটি তার শৈশবের স্মৃতি এবং সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। বর্তমানে তিনি “ডট.আটেলিয়ার্স” নামে একটি শিল্পী আবাসনের সঙ্গে যুক্ত, যা শিল্পীদের নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করতে সহায়তা করে।
বোয়াফোর কাজের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হয়, যা আমাদের সংস্কৃতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
তার শিল্পকর্ম শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং এটি একটি অনুপ্রেরণা, যা আমাদের সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।
প্রদর্শনীটি আগামী ১০ এপ্রিল থেকে ২৪ মে, ২০২৫ পর্যন্ত লন্ডনের গ্যাগোসিয়ান গ্যালারিতে চলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন