আফ্রিকার ঘানার শিল্পী আমোআকো বোআফোর সাফল্যের কাহিনী আজ বিশ্বজুড়ে। তাঁর তুলির ছোঁয়ায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জীবন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এনে দিয়েছে খ্যাতি।
সম্প্রতি, তিনি জেফ বেজোসের রকেট জাহাজে ছবি এঁকেছেন, যা তাঁর শিল্পী জীবনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ঘানার এই তরুণের উত্থান সত্যিই ঈর্ষণীয়।
১৯৮৪ সালে ঘানার আক্রা শহরে জন্ম নেওয়া বোআফোর শৈশব কেটেছে সাধারণ পরিবারে। তাঁর বাবা ছিলেন মৎস্যজীবী, আর মা গৃহিণী।
ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। খেলাধুলার পাশাপাশি ছবি আঁকাকে তিনি মনের শান্তির আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
টেনিস খেলার প্রতিও তাঁর ঝোঁক ছিল, এমনকি পেশাদার খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নও দেখতেন। তবে, শেষ পর্যন্ত শিল্পের প্রতি ভালোবাসাই তাঁকে টানে।
বোআফোর শিল্পী জীবনের মোড় ঘোরে ২০১৮ সালে, যখন তাঁর আঁকা ছবিগুলো চোখে পড়ে খ্যাতিমান শিল্পী কেহিন্দে উইলির। উইলির উৎসাহে বোআফোর কাজ আন্তর্জাতিক গ্যালারিগুলোতে প্রদর্শিত হতে শুরু করে।
এরপর, তাঁর শিল্পকর্মগুলি নিলামে কয়েক মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হতে শুরু করে। একজন শিল্পী হিসেবে এটি তাঁর জন্য বিশাল এক স্বীকৃতি ছিল।
২০২১ সালে, ফ্যাশন জগতে বোআফোর পরিচিতি আরও বাড়ে। তিনি বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড ডিওরের সঙ্গে কাজ করেন।
একই বছর, তিনি জেফ বেজোসের রকেট জাহাজে ছবি আঁকার সুযোগ পান। এই কাজটি ছিল তাঁর জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
বোআফো নিজে অবশ্য মহাকাশে যাওয়ার চেয়ে মাটিতেই থাকতে বেশি পছন্দ করেন, এমনটাই জানিয়েছেন।
বোআফোর চিত্রকর্মের একটি বিশেষত্ব হলো তাঁর আঙুল দিয়ে ছবি আঁকার কৌশল। এই পদ্ধতিতে তিনি তাঁর মডেলদের ত্বকের গভীরে আলো-ছায়ার খেলা ফুটিয়ে তোলেন, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
তাঁর ছবিতে ব্যবহৃত উজ্জ্বল রং এবং নকশাগুলি দর্শকদের মধ্যে এক ভিন্ন অনুভূতি তৈরি করে। তাঁর ছবিতে প্রায়ই ঘানার ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের নকশা দেখা যায়।
ফ্যাশনের প্রতি তাঁর আগ্রহের কারণে তিনি নিজের ডিজাইন করা পোশাকও তৈরি করেন।
বর্তমানে, বোআফোর কাজ বিশ্বজুড়ে প্রদর্শিত হচ্ছে। লন্ডনের গ্যাগোসিয়ান গ্যালারিতে তাঁর একক প্রদর্শনী চলছে।
তিনি তাঁর শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত আক্রার বাড়িতে একটি আর্ট ক্লাব এবং টেনিস একাডেমি তৈরির পরিকল্পনা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজের দেশের তরুণদের শিল্পচর্চায় উৎসাহিত করতে চান।
বোআফোর মতে, “আমাদের দেশে আরও বেশি করে শিল্পচর্চার সুযোগ তৈরি করা উচিত, যাতে এখানকার শিল্পীরা বাইরের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেরাই নিজেদের কাজগুলো বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারে।”
আফ্রিকার এই তরুণ শিল্পীর উত্থান প্রমাণ করে, কঠোর পরিশ্রম এবং ভালোবাসার মাধ্যমে যে কেউ তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। বোআফোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো তাঁর সৃজনশীলতার আরেকটি দিক উন্মোচন করে, যা আমাদের আরও অনেক নতুন কিছু উপহার দেবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান