প্রাণ বাঁচাতে মানুষের লড়াই! বাস্তুতন্ত্রের সংকটে ব্যাঙদের পাশে!

বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের জলাভূমি আর বনাঞ্চলে ব্যাঙ, স্যালামান্ডার সহ উভচর শ্রেণির প্রাণীদের জীবন আজ হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন আর মানুষের তৈরি করা নানা প্রতিকূলতার কারণে এদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি এদের টিকিয়ে রাখার জন্য জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে অচিরেই অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। নিউ ইয়র্কের হনিওয়ের একটি ব্যস্ত রাস্তার পাশে জন বাটেম্যান নামের একজন অধ্যাপক প্রায়ই তার বুট ও হেডল্যাম্প পরে বেরিয়ে পড়েন। উদ্দেশ্য একটাই – বর্ষাকালে রাস্তা পার হতে চাওয়া উভচরদের সাহায্য করা। তিনি তাদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারে সহায়তা করেন।

বাস্তবিক অর্থে, উভচরদের জন্য আবাসস্থলের অভাব একটি বড় সমস্যা। এদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ধরনের পরিবেশের প্রয়োজন হয়। প্রজনন এবং জীবনধারণের জন্য তাদের জলাভূমি ও শুকনো অঞ্চলের প্রয়োজন। কিন্তু রাস্তা, নগরায়ণ এবং বনভূমি ধ্বংসের কারণে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় তারা আবাসস্থল পরিবর্তনের সময় রাস্তার শিকার হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট ছোট জলাশয়, যা সাধারণত বসন্তকালে বনভূমিতে দেখা যায় এবং উভচরদের প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে, সেগুলিও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এগুলো সাধারণত জুলাই মাস পর্যন্ত জল ধরে রাখে এবং স্যালামান্ডার ও ব্যাঙের মতো উভচরদের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু ক্রমাগত উন্নয়ন, বিশেষ করে শহর ও শহরতলিতে নতুন বসতি স্থাপনের ফলে এই জলাশয়গুলো হয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে, অথবা তাদের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

উভচরদের এই সংকট শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক উভচর প্রজাতি তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল হারাচ্ছে এবং নতুন স্থানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপালাচিয়ান অঞ্চলে স্যালামান্ডারদের বিস্তার উত্তরে সরে যাচ্ছে।

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ক্যারেন লিপস-এর মতে, উষ্ণ জলবায়ুর কারণে শীতল রক্তের উভচরদের বেশি খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে, যা তাদের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য।

তবে আশার আলোও দেখা যাচ্ছে। জন বাটেম্যানের মতো অনেক প্রকৃতিপ্রেমীই এই বিপদ থেকে উভচরদের বাঁচাতে চেষ্টা করছেন। মার্গট ফাস নামে একজন নারী নিউ ইয়র্কের পিটার্সফোর্ডে ‘এ ফ্রগ হাউস’ নামে একটি কেন্দ্র চালান, যেখানে ব্যাঙ সংরক্ষণের জন্য কাজ করা হয়। তিনি ‘সেভ দ্য ফ্রগস ডে’ উদযাপন করে অর্থ সংগ্রহ করেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় নতুন জলাশয় তৈরি করেন। এছাড়াও, তিনি রাসায়নিক কীটনাশকমুক্ত বাগান তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দেন। কারণ কীটনাশক এক ঘণ্টার মধ্যে একটি ব্যাঙকে মেরে ফেলতে পারে।

এসবের পাশাপাশি, স্থানীয় জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লাইব্রেরিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হচ্ছে। জেনিসি ল্যান্ড ট্রাস্ট নামের একটি সংস্থা, যারা নিউ ইয়র্কের পুলেটনিভিলে কর্নওয়াল সংরক্ষিত এলাকার মালিক, তারাও তাদের জমিতে জলাভূমি পুনরুদ্ধার করে উভচরদের আবাসস্থল তৈরি করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উভচরদের রক্ষা করা শুধু পরিবেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি করাও জরুরি। শিশুদের মধ্যে প্রকৃতি প্রেম জাগানো এবং তাদের প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *