নতুন প্রজন্মের অত্যাধুনিক ট্রেনে চড়তে প্রস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র!
আমেরিকার রেল পরিবহন সংস্থা, অ্যামট্রাক (Amtrak), তাদের যাত্রী পরিবহনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে। আগামী ২০২৬ সাল থেকে তারা ‘অ্যামট্রাক এয়ারো’ (Amtrak Airo) নামের নতুন প্রজন্মের অত্যাধুনিক ট্রেন যুক্ত করতে চলেছে।
এই ট্রেনগুলো যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য, পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অ্যামট্রাকের এই পদক্ষেপ উন্নত যাত্রীসেবার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষার দিকেও তাদের মনোযোগের প্রমাণ।
১৯৭১ সাল থেকে অ্যামট্রাক আমেরিকার রেলপথে যাত্রী পরিষেবা দিয়ে আসছে। সময়ের সাথে সাথে বিমান পথের জনপ্রিয়তা বাড়লেও, অ্যামট্রাক এখনো দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে যাত্রী পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে টিকে আছে। আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে, অ্যামট্রাক তাদের বহরে নতুন এই ট্রেনগুলো যোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘অ্যামট্রাক এয়ারো’ ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনের অভ্যন্তরীন নকশা করা হয়েছে আধুনিক ও প্রশস্ত করে।
বিশাল আকারের জানালা (Panoramic windows) থাকার কারণে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করা আরও সহজ হবে। সাধারণ শ্রেণির (Coach) সিটগুলোতেও বেশি জায়গা, পায়ের জন্য অতিরিক্ত স্থান, উন্নত হেডরেস্ট, এবং কাপ ও ট্যাবলেটের জন্য আলাদা হোল্ডার রয়েছে।
এছাড়া, প্রতিটি আসনে পাওয়া যাবে ব্যক্তিগত চার্জিং পোর্ট ও ইউএসবি সংযোগের সুবিধা। বর্তমানে আমাদের দেশের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতেও এইসব সুবিধা যুক্ত করার চেষ্টা চলছে।
শুধু যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যই নয়, পরিবেশ সুরক্ষার দিকেও অ্যামট্রাক বিশেষভাবে নজর দিয়েছে। নতুন এই ট্রেনগুলো ডিজেল ইঞ্জিনের তুলনায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কম কার্বন নিঃসরণ করবে।
ফলে পরিবেশ দূষণ কম হবে এবং এটি টেকসই পরিবহনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ট্রেনগুলো ঘন্টায় প্রায় ১২৫ মাইল (২০০ কিলোমিটার) বেগে চলতে সক্ষম, যা ভ্রমণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে।
অ্যামট্রাক কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই ট্রেনে উন্নত সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করেছে। হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য উপযুক্ত স্থান, সহজে ব্যবহারযোগ্য শৌচাগার এবং প্রবেশপথে বিশেষ লিফটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অ্যামট্রাকের প্রেসিডেন্ট রজার হ্যারিস এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “টেকসই পরিবহন, আধুনিক ডিজাইন এবং বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ‘অ্যামট্রাক এয়ারো’ ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণ বদলে দেবে। এটি অ্যামট্রাকের ভবিষ্যৎ।”
প্রাথমিকভাবে, নতুন এই ট্রেনগুলো ‘নর্থইস্ট করিডোর’, ‘এম্পায়ার সার্ভিস’ এবং ‘ভারমন্টের’ মত গুরুত্বপূর্ণ রুটে চলাচল করবে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে অন্যান্য রুটেও এই ট্রেনগুলো যুক্ত করা হবে।
অ্যামট্রাক বর্তমানে রেল ইয়ার্ড সম্প্রসারণ, আধুনিক স্টেশন তৈরি এবং জনপ্রিয় রুটে নতুন পর্যবেক্ষন বগি যুক্ত করার মতো বিভিন্ন প্রকল্পে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে উন্নত যাত্রীসেবার জন্য আমাদেরও এমন আধুনিক ও পরিবেশ-বান্ধব ট্রেনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আমাদের দেশের রেল ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণের মাধ্যমে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য এবং পরিবেশ সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি আনা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: ট্রাভেল + লেজার