অবাক করা স্বীকারোক্তি! কর ফাঁকির দায়ে কাঠগড়ায় কার্লো আনচেলত্তি

রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তি বর্তমানে স্পেনের আদালতে এক গুরুতর অভিযোগের সম্মুখীন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি ২০১৪ ও ২০১৫ সালে নিজের ইমেজ স্বত্ব থেকে পাওয়া ১ মিলিয়নের বেশি ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩ কোটি টাকার বেশি) কর ফাঁকি দিয়েছেন।

এই ঘটনায় তার ৪ বছর ৯ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৩.২ মিলিয়ন ইউরোর জরিমানা হতে পারে।

অভিযোগ অনুযায়ী, ৬৫ বছর বয়সী এই ইতালীয় কোচ, যিনি একসময় চেলসি ও এভারটনের মতো ক্লাবেরও দায়িত্বে ছিলেন, স্পেনের বাইরের কিছু শেল কোম্পানির মাধ্যমে তার ইমেজ স্বত্বের আয়ের হিসাব গোপন করেছেন।

এই অভিযোগের শুনানিতে আনচেলত্তি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি সবসময় নিজের বেতনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন এবং অন্যান্য আর্থিক বিষয়গুলো তার উপদেষ্টাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন।

আদালতে তিনি আরও বলেন, “আমার ইমেজ স্বত্ব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না। কোচের চেয়ে খেলোয়াড়দের গুরুত্ব বেশি, কারণ তারাই তো জার্সি বিক্রি করে। আমি শুধু চেয়েছিলাম তিন বছরে ৬ মিলিয়ন ইউরো রোজগার করতে। আমি কখনো বুঝতে পারিনি যে এখানে কোনো ভুল হচ্ছে।”

আনচেলত্তি জানান, যখন রিয়াল মাদ্রিদ প্রস্তাব দেয় যে তার বেতনের ১৫ শতাংশ ইমেজ স্বত্ব থেকে পরিশোধ করা হবে, তখন তিনি রাজি হয়েছিলেন এবং বিষয়টি তার ব্রিটিশ উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমার মনে হয়েছিল এটা স্বাভাবিক।

আমার সঙ্গে অন্যান্য খেলোয়াড় এবং আগের কোচও একই কাজ করতেন। আমি আমার ব্রিটিশ উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং এর বেশি কিছু ভাবিনি, কারণ সবকিছু ঠিকঠাক মনে হয়েছিল।

আমি কখনো ভাবিনি যে কোনো প্রতারণা হতে পারে। তবে, যেহেতু আমি এখন এখানে দাঁড়িয়ে, তার মানে হয়তো কিছু ভুল হয়েছে।”

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, স্পেনের কর বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও, আনচেলত্তি শুধুমাত্র ক্লাব থেকে পাওয়া ব্যক্তিগত আয়কর জমা দিয়েছেন, কিন্তু ইমেজ স্বত্ব থেকে পাওয়া অর্থ গোপন করেছেন।

প্রসিকিউটরদের দাবি, তিনি এই স্বত্ব থেকে পাওয়া ১,০৬২,০৭৯ ইউরোর কর পরিশোধ করেননি।

২০১৪ সালে এই পরিমাণ ছিল ১.২৪ মিলিয়ন ইউরো এবং পরের বছর তা বেড়ে হয় ২.৯৬ মিলিয়ন ইউরো।

আনচেলত্তি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমি আইনের প্রতি এবং বিচার বিভাগের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখি।

আমি উদ্বিগ্ন নই, তবে অবশ্যই বিরক্ত, যদি তারা বলে যে আমি প্রতারণা করেছি। আমি আবারও বলছি, আমি ন্যায়বিচারের ওপর বিশ্বাসী।”

এই ঘটনায় আনচেলত্তি একা নন, এর আগেও স্পেনের ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছেন অনেক নামিদামি ফুটবল তারকা।

২০১৬ সালে লিওনেল মেসি এবং তার বাবা জর্জ মেসির ২১ মাসের কারাদণ্ড হয়, কারণ তারা বার্সেলোনায় খেলার সময় মেসির ইমেজ স্বত্বের কর ফাঁকি দিয়েছিলেন।

যদিও তাদের জেলে যেতে হয়নি, কারণ স্পেনে দুই বছরের কম কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে সাধারণত তা কার্যকর করা হয় না।

শুধু মেসিই নন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার সময় কর ফাঁকির কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন এবং প্রসিকিউটরদের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে ১৮.৮ মিলিয়ন ইউরোর জরিমানা দিয়ে ২১ মাসের স্থগিত কারাদণ্ড পান।

এছাড়া, হোসে মরিনহোও রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজার থাকাকালীন সময়ে কর ফাঁকির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন এবং ২.২ মিলিয়ন ইউরোর জরিমানা দেন।

অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের স্ট্রাইকার দিয়েগো কস্তা ২০১৪ সালে চেলসিতে যোগ দেওয়ার সময় ৫.১৫ মিলিয়ন ইউরোর বেশি আয়ের হিসাব না দেখানোর কারণে ৫৪৩,২০৮ ইউরোর জরিমানা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

বর্তমানে এই মামলার বিচার চলছে এবং এর ফলাফল কি হয়, সেদিকেই তাকিয়ে ফুটবল বিশ্ব।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *