আতঙ্ক! ১০,৫০০ বছর আগের নারীর মুখাবয়ব, ডিএনএ’র মাধ্যমে!

প্রায় ১০,৫০০ বছর আগের এক নারীর মুখের অবয়ব কেমন ছিল, তা জানতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বেলজিয়ামের একটি গুহা থেকে পাওয়া ওই নারীর কঙ্কালের ডিএনএ (DNA) বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই নারীর চোখের রং ছিল নীল এবং ত্বক ছিল অপেক্ষাকৃত ফর্সা।

প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা নারীটির মুখের একটি চিত্র তৈরি করেছেন। এই গবেষণার প্রধান, ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ইজাবেল ডি গ্রোট সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ওই নারীর চামড়ার রং মেসোলিথিক যুগের (Mesolithic period) অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় মানুষের থেকে সামান্য হালকা ছিল।

এই আবিষ্কার ইউরোপের প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাগুলোর সঙ্গে ভিন্নতা তৈরি করেছে। এতদিন ধারণা করা হতো, সে সময়ের মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্য একই রকম ছিল।

ডি গ্রোট আরও জানান, নারীটির বয়স ছিল ৩৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। তাঁর নাকের উঁচু হাড় ছিল, যা ইংল্যান্ডের ‘চেডার ম্যান’-এর (Cheddar Man) সঙ্গে মিলে যায়।

শুধু তাই নয়, নারীর কপালে ভ্রু-র হাড়গুলোও বেশ শক্ত ছিল।

১৯৮৮-৮৯ সালে দিনান্তের মার্গক্স গুহায় (Margaux cave) খননকালে এই নারীর দেহাবশেষ পাওয়া যায়। তাঁর সঙ্গে আরও আটজন নারীর কঙ্কাল ছিল।

ডি গ্রোটের মতে, সাধারণত মেসোলিথিক যুগের সমাধিস্থলে নারী, পুরুষ ও শিশু—সবার কঙ্কাল পাওয়া যায়।

কিন্তু এখানে শুধু নারীদের উপস্থিতি একটি বিশেষ দিক।

গবেষকরা জানিয়েছেন, কঙ্কালগুলোর মধ্যে অনেকের শরীরে লাল রঙের মাটি বা “ওকার” (ochre) লেপা ছিল।

যা কোনো ধর্মীয় আচার বা প্রতীকী আচরণের অংশ হতে পারে। অধিকাংশ দেহাবশেষ পাথরের টুকরো দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া, একজনের খুলিতে মৃত্যুর পর কাটার চিহ্ন পাওয়া গেছে।

ডি গ্রোট আরও জানান, এই সমাধিস্থলটি কয়েকশ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছিল, যা ইঙ্গিত করে যে সেই সময়ের মানুষের স্মৃতিতে এই স্থানটির বিশেষ গুরুত্ব ছিল।

গবেষক দলের সদস্য ফিলিপ ক্রম্বে (Philippe Crombé) জানান, নারীর ত্বকের রং কিছুটা অপ্রত্যাশিত ছিল, কারণ পশ্চিম ইউরোপে সেই সময়ের মানুষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে একই ধরনের জিনগত বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে।

তবে তিনি মনে করেন, পশ্চিম ইউরোপের বিশাল অঞ্চলে এই ধরনের ভিন্নতা থাকাটা স্বাভাবিক।

গবেষণায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি সম্পর্কে ক্রম্বে জানান, খননকার্য চালানোর সময় প্রাচীন ডিএনএ নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ ছিল না।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তি উন্নত হওয়ায়, পুরনো খননকার্য থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নতুন গবেষণা করা সম্ভব হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা নারীর খুলি থেকে ভালো মানের ডিএনএ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা মুখের বিস্তারিত পুনর্গঠনে সাহায্য করেছে।

ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে নারীর ত্বক, চুল ও চোখের রং সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে।

এছাড়া, অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর অলঙ্কার ও ট্যাটুর একটি চিত্রও তৈরি করা হয়েছে।

গবেষকরা মনে করেন, এই আবিষ্কার প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের সামাজিক কাঠামো এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে।

তাঁরা সমাধিস্থলে একসঙ্গে কবর দেওয়া নারীগুলোর মধ্যে সম্পর্ক এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে আরও গবেষণা করার পরিকল্পনা করছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *