প্রাচীন মিশরে আবিষ্কৃত হলো এক রহস্যময় রাজার সমাধিস্থল।
মিশরের প্রাচীন শহর আবিদোসে সম্প্রতি এক বিশাল আকারের সমাধিস্থল খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ধারণা করা হচ্ছে, এটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে, দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে (Second Intermediate Period, খ্রিস্টপূর্ব ১৬৪০-১৫৪০ অব্দ) আবিদোস রাজবংশের কোনো রাজার সমাধিস্থল।
এই রাজবংশ একসময় মিশরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে রাজত্ব করলেও, পরবর্তীকালে যেন ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। নতুন এই আবিষ্কার সেই সময়ের ইতিহাস নতুন করে লিখতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খননকার্য পরিচালনা করেন পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক জোসেফ ওয়েগনার। তাঁর মতে, আবিষ্কৃত সমাধিস্থলটি আবিদোস রাজবংশের শাসকদের মধ্যে পাওয়া সবচেয়ে বড় সমাধিগুলোর একটি।
এর প্রবেশপথ সজ্জিত এবং ভেতরে একাধিক কক্ষ রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সমাধির ভেতরের দেয়ালের চিত্রলিপিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাজার নাম এখনো পর্যন্ত পড়া সম্ভব হয়নি।
তবে গবেষকরা মনে করছেন, এই সমাধি সম্ভবত সেই সময়ের কোনো প্রভাবশালী রাজার, যিনি সম্ভবত সেনেব-কায় নামের রাজার পূর্বসূরি ছিলেন। সেনেব-কায় ছিলেন আবিদোস রাজবংশের একজন রাজা, যাঁর সমাধিও আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল।
আবিষ্কৃত সমাধিস্থলটি প্রায় ২৩ ফুট গভীরে অবস্থিত। সমাধির মূল কক্ষটি প্রায় ৬ মিটার লম্বা এবং ১.৯ মিটার চওড়া।
সমাধিতে দেবী আইসিস ও নেফথিসের ছবি পাওয়া গেছে, যা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় মৃতের প্রতি শোকের প্রতীক হিসেবে আঁকা হতো।
ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায়, আবিদোস শহর একসময় পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হতো। এখানে আন্ডারওয়ার্ল্ডের দেবতা ওসাইরিসের সমাধিও ছিল।
প্রাচীনকালের ফারাওদের সমাধির জন্যেও এই স্থানটি বিশেষভাবে পরিচিত ছিল। অধ্যাপক ওয়েগনার এবং তাঁর দল এই অঞ্চলে আরও প্রায় ১০,০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে খননকার্য চালাবেন, যাতে আরও সমাধি খুঁজে পাওয়া যায়।
তাঁদের ধারণা, এই অঞ্চলে হয়তো আরও ১২ থেকে ১৫ জন রাজার সমাধিস্থল থাকতে পারে।
কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সিটির মিশরবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সালিমা ইকরাম এই আবিষ্কারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তাঁর মতে, এই ধরনের আবিষ্কারগুলো সে সময়ের রাজকীয় সমাধির স্থাপত্য, রাজবংশের সদস্য এবং তাঁদের রাজত্বের ক্রম সম্পর্কে ধারণা দেয়।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্বের সহযোগী অধ্যাপক লরেল বেস্টক মনে করেন, এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, অতীতের অনেক ঘটনা, যা ইতিহাসে সেভাবে উল্লেখ করা হয়নি, তা অনুসন্ধানের সুযোগ রয়েছে।
বর্তমানে, সমাধিস্থলের রাজার পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তবে গবেষকরা এই রাজার পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, যা প্রাচীন মিশরের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উন্মোচন করতে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন